গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা যশোরের নওয়াপাড়াতে অবস্থিত অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, এখানে বিভিন্ন রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ চিকিৎসকরা রোগীদের পাঠান নিজেদের চুক্তি বদ্ধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
অভয়নগর উপজেলার রোগী ছাড়াও পাশ্ববর্তী উপজেলার রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে। সে জন্য সারা বছর রোগীর ভিড় লেগেই থাকে। প্রতিদিন এখানে গড়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন প্রায় ৫০০ রোগী। ফলে, অসাধু চিকিৎসকদের জন্য এনে দেয় টেস্ট বাণিজ্যর অনেক বড় সুযোগ। এ সব চিকিৎসকরা এখন চিকিৎসা দেওয়ার থেকে বাণিজ্যের দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছেন।
সেবাপ্রার্থী রোগীদের নিজের চুক্তিবদ্ধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে চিকিৎসক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর সম্মিলিত মার্কেটিং পলিসি।
চিকিৎসকদের চুক্তি বদ্ধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে দেওয়া হয় তার সহকারীসহ আরও কয়েক জন। চিকিৎসকরা প্রকাশ্যে নিজের বা চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাছে রোগীদের প্রেসক্রিপশন দিয়ে তাদের সেখানে যেতে বাধ্য করেন।
এই চিকিৎসক শ্রেণির কারসাজিতেই আশপাশের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চলছে রমরমা টেস্ট বাণিজ্য। হাসপাতালের এ চক্রটি গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগীদের বিভ্রান্ত করে এ কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত । অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় উচ্চমূল্যে টেস্ট করাতে গিয়ে ওষুধ কেনার টাকা পর্যন্ত থাকছেনা রোগীর কাছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনেক চিকিৎসক নিজেই কোন ডায়াগনস্টিক থেকে টেস্ট করাতে হবে তা সরাসরি রোগী বা তার স্বজনদের বলে দেন।
মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ছপুরা খাতুন সাথে (৪৮) বলেন, ‘চিকিৎসক তার ব্যবস্থাপত্র লিখে তার পাশে থাকা একজনের কাছে দিয়ে বলেন- এর সাথে যান । সেখানে যাওয়ার পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ ২ হাজার ৬০০ টাকার একটি বিল সেখান থেকে তার হাতে ধরিয়ে দেয়। এখন ওষুধ কেনার মতো টাকা আমার কাছে নেই।’
উপজেলার প্রেমবাগ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রিনা (৩৮) বলেন, ‘আমি জরুরী বিভাগে ডাঃ শোভন বিশ্বাসকে দেখানোর পরে কিছু টেস্ট দিয়ে লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক থেকে করাতে বলেন। কিন্তু আমি আমার পরিচিত অন্য একটা ডায়াগনস্টিক থেকে টেস্ট করিয়ে তাকে দেখালে তিনি আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।’
এ বিষয়ে ডাক্তার শোভন বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পুর্ন অস্বীকার করেন।
চিকিৎসকদের এমন টেস্ট বানিজ্য নিয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলিমুর রাজীব বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, মেডিকেল সার্ভিস নিয়ম অনুযায়ী কোন চিকিৎসকই রোগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে পারেননা। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :