জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিরার বিকেলে উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের তারতাপাড়ায় অনুষ্ঠিত হয় এই মই দৌড় খেলা। ঐতিহ্যবাহী মই দৌড় খেলাকে টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানাতে তারতাপাড়া গ্রামবাসী এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এই খেলা দেখতে আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষ ভিড় করেন।
প্রতিবছর শীতের এই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ষাঁড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আনন্দ উল্লাসের জন্যই এই খেলায় অংশ নেন ষাড় মালিকরা। এ খেলায় চারটি করে ষাঁড় একত্রে মইয়ের সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধা হয়। পরে মইয়ের উপর দুজন ব্যক্তি উঠে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে দৌড় শুরু করে। মই থেকে পড়ে গেলে বা সিমানার বাহিরে চলে গেলে বাতিল হয় দল। মজার এই খেলায় ঝুঁকি নিয়েও থাকতে হয় সতর্ক। দৌড় শুরু হলে, উৎসুক জনতা চিৎকার ও হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেয় পছন্দের দলকে। যে দল গন্তব্যে সবচেয়ে কম সময়ে পৌঁছাতে পারে, সেই দল হয় বিজয়ী।
মাদারগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে মই দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফায়েজুল ইসলাম লাঞ্জু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মান্নান, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেল, উপজেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোখলেছুর রহমান মোখলেস, বালিজুড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মুসা, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, উপজেলা ওলামাদলের সদস্য হাবিবুলস্নাহ শাহীন প্রমুখ।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই মই দৌড় প্রতিযোগিতায় জেলার বেশকয়েকটি উপজেলার ১৮টি দল অংশ নেয়। যার মধ্যে খেলায় প্রথম হয়েছে তারতাপাড়া এলাকার বেলাল মেম্বারের দল। দ্বিতীয় হয়েছে একই এলাকার সুলতান মন্ডলের দল, তৃতীয় হয়েছে হয়বর প্রামানিকের দল, চতুর্থ হয়েছে সুখনগরী এলাকার আব্দুর রাজ্জাক মুসল্লীর দল ও পঞ্চম হয়েছে চর কয়ড়া এলাকার আব্দুল ছালাম মন্ডলের দল। এ খেলায় প্রথম পুরস্কার হিসেবে ছিল একটি রেফ্রিজারেটর, দ্বিতীয় পুরস্কারও রেফ্রিজারেটর, তৃতীয় পুরস্কার বাইসাইকেল, চতুর্থ পুরস্কার বড় পাতিল ও পঞ্চম পুরস্কার মাঝারি পাতিল।
খেলা দেখতে আসা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলমগীর কবির বলেন, মই দৌড় খেলা সম্পর্কে বাবা-দাদার কাছ থেকে শুধু গল্প শুনেছি। আগে কখনো দেখা হয়নি। আমার জীবনের প্রথম এ খেলা দেখলাম। খেলা সম্পর্কে তেমন ধারণাও ছিল না। খেলা দেখে খুবই ভালো লাগল।
তারতাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুর নবী বলেন, এ খেলার খবর অনেক আগে থেকেই এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। দুপুরের পর এই মাঠে চলে আসেন তিনি। তাঁর মতো হাজারো মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন। বড় বড় ষাঁড় দিয়ে প্রতিটি দল তৈরি করা হয়েছে। খেলা দেখে খুবই ভালো লেগেছে।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা খায়রুল ইসলাম বলেন, মই দৌড় প্রতিযোগিতা গ্রামবাংলার শত বছরের পুরোনো একটি খেলা। আগে সবচেয়ে বেশি এই প্রতিযোগিতা হতো। এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তরুণ প্রজন্মকে এই খেলা সম্পর্কে জানাতে এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা থেকে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে এলাকাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করার চেষ্টা করা হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফায়েজুল ইসলাম লাঞ্জু বলেন, যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যবাহী এ খেলা তুলে ধরতেই এমন আয়োজন। এসব গ্রামীণ খেলা হারানোর পথে। সচরাচর এ খেলাগুলোর আয়োজন করা হয় না। এমন আয়োজনের স্বাক্ষী হতে পেরে আমরা আনন্দিত। ঐহ্যিবাহী মই দৌড় খেলা ধরে রাখতে এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতিবছর এমন আয়োজনের আহবান জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :