মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চলতি মৌসুমে নদী, নালা, হাওর ও জলাশয়ে কাঙ্ক্ষিত পানি নেই। পানির অভাবে দেশি মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে পানি কম হওয়ায় মাছের প্রজনন কমে গেছে। একই সঙ্গে আগের তুলনায় দেশি জাতের অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে হাইব্রিড মাছের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে হাইব্রিড প্রজাতির মাছের সরবরাহ ও বিক্রি বেড়েই চলেছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, একসময় কমলগঞ্জের জলাশয়ে ২৬০ প্রজাতির দেশি মাছ ছিল। বর্তমানে প্রায় ১০০ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অনাবৃষ্টির কারণে নদী ও হাওরে পানির অভাবে দেশীয় মাছের সংকট তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে নদী ও জলাশয়ে বিষ প্রয়োগ করে মাছের প্রজননক্ষেত্র নষ্ট করা ও বিভিন্ন নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ শিকারের কারণে দেশি মাছ কমে গেছে।
উপজেলার পতনঊষা্র ইউনিয়নের জেলে রিপন মালাকার জানান, ভরা বর্ষা মৌসুমে নদী ও হাওরে পানি না থাকায়, মাছ উৎপাদন না হওয়ায় মাছ শিকার করতে পারেননি পুরো মৌসুমে। অনেক দিন মাছ শিকারের সরঞ্জাম নিয়ে নদী থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। মাছ ধরতে না পারলে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের জন্য ধার-দেনা করতে হয়।
জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর হাইল হাওয়ার এলাকার বাসিন্দা মৎস চাষী জেলে নিমাই ও জয়ধন জানান, ‘তারা সারা জীবন নদী থেকে মাছ শিকার করে বিকেলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন, কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে হাওর ও নদীতে গিয়ে আগের মতো মাছ পান না। বিভিন্ন জায়গা থেকে কার্পজাতীয় মাছ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন তারা।’
কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুর রহমান বলেন, ‘মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কাঙ্ক্ষিত পানির অভাবে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন হাওর আর হাওর নেই। হাওর এখন কৃষিজমি হয়ে গেছে। উপজেলার খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট হওয়ার কারণেও মাছের প্রজননক্ষেত্র হারিয়ে যাচ্ছে।’
‘রাতের অন্ধকারে বিষ প্রয়োগ ও নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে অবাধে মাছ শিকার করা হয়। শুধু মাছ নয়; মাছের পাশাপাশি জলজ প্রাণীগুলোও বিলুপ্ত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদী-নালা, খাল-বিল, কৃষি ও পরিত্যক্ত জমিতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগের কারণে দেশি মাছগুলোর প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে দেশি মাছ এখন আগের মতো পাওয়া যায় না।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :