AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

গরিবের ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা


Ekushey Sangbad
হৃদয় দেবনাথ
১২:২১ পিএম, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫
গরিবের ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা

ফারজানা হক পর্ণা মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলারেল হাসপাতালে কনসালন্টেন এন্ড গাইনি বিভাগে কর্মরত রয়েছেন । ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট  জেলারেল হাসপাতালেে তিনি যোগদান করেন তিনি। ২০১৪ সাল থেকেই আর্থিকভাবে অসহায় অসচ্ছল রোগীদের বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করে ব্যাপক প্রশংসিত হন ডা. ফারজানা হক পর্ণা। শুধু তাই নয় প্রতি মাসে আর্থিকভাবে অসচ্ছল অন্তত ২০ জন রোগীকে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করে ইতোমধ্যে গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন ফারজানা হক পর্ণা।ইতোমধ্যে আর্থিকভাবে অসহায় অসচ্ছল রোগীদের কাছে এক আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেছেন তিনি।

জানা যায় ২০১৪ সাল হতে আজ অবধি প্রায় ৩ হাজারেরও অধিক রোগিকে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি মূলত তাদেরই বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করি যারা আর্থিকভাবে প্রচন্ড দুর্বল অর্থাৎ নিম্ন মধ্যবিত্ত তথা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষজনকে।চায়ের দেশ খ্যাত মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি চা বাগান রয়েছে।এই চা শিল্পের সাথে জড়িত চা শ্রমীরা আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল। 

তিনি বলেন,চা বাগানে কর্মরত নারী চা শ্রমিকদের পরিবারে সদস্য সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। তাদের উপার্জনের অর্থ দিয়ে পরিবার নিয়ে চলতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের। শ্রমজীবী এসব নারী চা শ্রমিকদের মধ্যে একাধিক সন্তান নেয়ার প্রবণতা রয়েছে। 

তিনি বলেন,নারী চা শ্রমিকরা একাধিক সন্তান গর্ভে ধারণ একই সাথে রোধে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কঠোর পরিশ্রম করার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের   জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার সমস্যায় বেশি ভোগেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমার কাছে চা বাগানে কর্মরত নিম্ন আয়ের নারী চা শ্রমিকরাই জরায়ু সমস্যা নিয়ে বেশি আসেন । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পরিশ্রমী এসব নারী চা শ্রমিকরা আর্থিকভাবে অত্যান্ত দুর্বল থাকেন। 

ডা.ফারজানা হক পর্ণা বলেন,আমাদের কাজটাই সেবামূলক তাই চেষ্টা করি সাধ্যমত অসহায় আর্থিকভাবে দুর্বল রোগীদের কোনোপ্রকার টাকা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে । মৌলভীবাজারের দি হোপ প্রাইভেট হসপিটালে প্রায় ১০ বছর যাবৎ বিনামূল্যে জরায়ু চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা।মৌলভীবাজার হোপ প্রাইভেট হসপিটালে প্রতিবছর স্কলাপস প্রজেক্টের আওতায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল অসহায়, বিশেষ করে চাবাগানে কর্মরত নারী চা শ্রমিকদের জরায়ু জটিলতা সংক্রান্ত রোগীর ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা। প্রতি বছর প্রায় ৩ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন ডাক্তার ফারজানা হকসহ বিজ্ঞ চিকিৎসকরা।

শ্রীমঙ্গল আশিদ্রুন ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. নাহিদ ইসলাম জানান,আমার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর ডাক্তার ফারজানা হক এর কাছে নিয়ে যাই। তার তত্ত্বাবধানেই মৌলভীবাজারের হোপ প্রাইভেট হসপিটালে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা চলে ,এক পর্যায়ে সিজারের মাধ্যমে আমি সন্তানের বাবা হই ।

নাহিদ জানান,হসপিটালে মোট বিল আসে ৬৫ হাজার টাকার মতো কিন্তু ডাক্তার ফারজানা হকের নির্দেশে আমার কাছ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল নিয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। নাহিদ ইসলাম ডাক্তার সুবর্ণা হক  এর সুস্থতা ও সুন্দর জীবন কামনা করে দোয়া করেন।

নাহিদ বলেন ,বহু চিকিৎসকের কাছে গিয়েছি কিন্তু ডাক্তার সুবর্ণা হক দীর্ঘ সময় দিয়ে মনোযোগ দিয়ে আমাদের সমস্যার কথা শুনেছেন একই সাথে সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন ।নাহিদ বলেন এখনকার চিকিৎসকরা রোগীদের সমস্যার কথা এক দুই মিনিট শুনেই প্রেসক্রিপশন হাতে ধরিয়ে দেন এ ক্ষেত্রে ডাক্তার ফারজানা সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম। তিনি যেভাবে মনোযোগ দিয়ে যথেষ্ট সময় ব্যায় করে রোগীর সমস্যার কথা শুনেন এতে রোগীরা এমনিতেই অর্ধেক সুস্থ হয়ে যায়। 

কমলগঞ্জ উপজেলার মহাজন বাড়ির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিধবা এক নারী বলেন, আমি জরায়ু সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলাম। আর্থিক টানাপোড়নের কারণে চিকিৎসাও নিতে পারছিলাম না। ডাক্তার ফারজানা হকের বিষয়ে পাড়ার এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পেরে ডিসেম্বর মাসে মৌলভীবাজারের হোপ প্রাইভেট হসপিটালে ডাক্তার সুবর্ণা হক পর্ণার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়েছি সম্পূর্ণ ফ্রি। কারণ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানো আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল।আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ বলেও জানান তিনি। 

তিনি বলেন,আমার পাশের বাড়ির একজন রোগীও এই ডাক্তারের কাছেই বিনামূল্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেছেন। 

টেংরা বাজার এলাকার রিক্সা চালক আলমগীর মিয়ার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম (৫০) জানান, হোপ প্রাইভেট হসপিটালে ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণার তত্ত্বাবধানে গত মাসে আমি  জরায়ুর অস্ত্রোপচার  করিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে এ রোগে প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছিলাম কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি।এলাকার এক পরিচিত ভাবীর কাছে এই ডাক্তারের সম্পর্কে জানতে পেরে ডাক্তার সাহেবের সাথে দেখা করে বিস্তারিত সব জানিয়েছি । তিনি সাথে সাথে আমাকে শান্তনা দিয়ে বলেছেন, চিন্তা করবেন না । আপনার অপারেশন হবে ,টাকা পয়সার বিষয় আমি দেখবো। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আমার অপারেশন হয়েছে। আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণার জন্য তিনি নামাজ পরে প্রতিনিয়ত দোয়া করেন বলে জানান তিনি।

এদিকে ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা নিক্সন নামে এক তরুণ বলেন, আমার খালামণিকে নিয়ে হোপ প্রাইভেট হাসপাতালে এসেছি। এখানে ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা অপারেশন করেন। তিনি বিনামূল্যে জরায়ুর খুব ভালো অপারেশন করেন এক প্রতিবেশীর কাছে শুনে এসেছি। অপারেশন সফল হয়েছে। অপারেশনের জন্য কোন টাকা পয়সা লাগেনি বলেও জানান এ তরুণ ।

হোপ প্রাইভেট হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বে থাকা শিপ্রা তরফদার বলেন, আমি হোপ প্রাইভেট হসপিটালে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আমি অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বে আছি।আমাদের এখানে প্রতি মাসে বিনামূল্যে মিনিমাম  ২০টা অস্ত্রোপচার হয়। স্কলাপসের প্রজেক্টের অধীনে সম্পূর্নই বিনামূল্যে এইখানে অস্ত্রোপচার করা হয়।তিনি বলেন বিজ্ঞ ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা অপারেশন করেন। প্রশান্তি প্রজেক্টর মাধ্যমে ২০১৪ থেকে ফ্রি অপারেশন শুরু হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা বলেন,আমি মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হসপিটালের   কনসালন্টেন এন্ড গাইনি হিসেবে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কর্মরত রয়েছি। মৌলভীবাজার যোগদান করেছি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আজ অবধি এই একই স্থানে টানা কাজ করে যাচ্ছি। 

ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা বলেন, এই ফ্রি চিকিৎসা মূলত শুরু হয়েছে ২০১৪ সাল থেকে। দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ফ্রি চিকিৎসা চলছে। প্রতি মাসে আমরা ২০ টা করে বিনামূল্যে ধারাবাহিক অপারেশন করে যাচ্ছি । এই হিসাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজারের অধিক রোগি এখানে ফ্রি চিকিৎসা পেয়েছেন। এখানে যে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হয় তার কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে। তারা হচ্ছে নিম্ন মধ্যবিত্ত আর দরিদ্র শ্রেণীর মানুষজন। বেশিরভাগ রোগীই নারী চা শ্রমিক। প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম আর অধিক সন্তান ধারণ করতে গিয়ে বেশিরভাগ নারী চা শ্রমিক এই জরায়ু সমস্যায় ভুগেন । বেশিরভাগ নারী চা শ্রমিক জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। আমরা সাধ্যমত তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করি ।

হোপ প্রাইভেট হসপিটালের ডিরেক্টর নুসরাত জাহান শিফা সাংবাদিকদের জানান, আমি হোপ প্রাইভেট হসপিটালের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ২০১৩ সাল থেকে আমাদের এখানে ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা অপারেশন করেন। এই চিকিৎসা এনজিও সংস্থা প্রশান্তি প্রজেক্ট এর মাধ্যমে হয়। ওরা কিছু টাকা আমাদেরকে দেয়। ওই টাকা দিয়েই আমরা জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসা করে থাকি। এখানে দুই হাজারের অধিক রোগীর অপারেশন হয়েছে। এখন পর্যন্ত কারো কোন প্রকার সমস্যা হয়েছে বলে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। হাসপাতাল থেকেও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করি রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য। এই হসপিটালে চা বাগান কর্মরত নারী চা শ্রমিক ছাড়াও সমতলে বসবাসকারী নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষজন চিকিৎসা নিতে আসেন। এখানে যারা সমস্যা নিয়ে আসেন তাদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এই প্রজেক্টটাই আসলে বাগানে বসবাসকারী হতদরিদ্র এবং গরিব অসহায় মানুষদের জন্য। চা শ্রমিক নারী রোগীর সংখ্যাই   বেশি। আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে চাই ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা এই প্রজেক্টের চিকিৎসা সেবায় একজন নিবেদিত প্রাণ। 

উল্লেখিত প্রজেক্টের  কাজর জন্য আমার হসপিটালের পক্ষ থেকে আলাদা রুমও দেয়া হয়েছে। আমাদের হসপিটালের ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে আয়ারাও নিয়মিত রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন।দরিদ্র অসহায় রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অপারেশন করা হয়ে থেকে। এসব সার্ভিসের জন্য কারো কাছ থেকে কোন প্রকার ফি বা টাকা গ্রহণ করা হয়না।

একুশে সংবাদ/ এস কে 
 

 

Link copied!