রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে মতিহার থানা উত্তরের সক্রিয় কর্মী শিমুল ইসলাম সিহাব (১৯) নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো উদঘটান না হওয়ায় মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা গেছে। পরিবার ও এলাকাবসীর দাবি দ্রুত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বের করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে নইলে বিচারের দাবিতে আন্দোলন করা হবে।
জানা গেছে ছাত্রদল কর্মী শিমুল ইসলাম সিহাব রাজশাহী কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ী মহানগীর বুধপাড়া এলাকায়। বাবার নাম জামাল মিস্ত্রী। তার আরো দুই বোন আছে। আর কোন ভাই নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হলো, তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাইক দুর্ঘটনা, নাকি কারও মারধরের শিকার হয়ে মারা গেছেন, তা নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা।সিহাবের বোন পলি খাতুন জানান, গতরাত সোয়া ৮ টার দিকে আমার ভাই আমাকে শুক্রবার পিঠা খাওয়ার জন্য দাওয়ায় দিয়েছে মুঠোফোনে এটাই শেষ কথা। আমি হাজির হয়েছি বাড়ীতে কিন্তু ভাই আর দুনিয়াতে নেই। আমার ভাইকে যারা মেরেছে তাদের বিচার চাই।
সিহাবের চাচাতো ভাই বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সিসিটিভি লাগানো আছে তা দেখলেই আসল কারণ বেরীয়ে আসবে। আমরা আমার ভায়ের হত্যার বিচার চাই।
সিহাবের প্রতিবেশী দুলাল হোসেন বলেন, ছেলে হিসেবে খুবই ভালো। তার এলাকায় কোন বদনাম নেই। শুনেছি একটি মেয়ে নিয়ে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে গিয়েছিলো। সেখানে রাবির প্রক্টর নাকি টহলে ছিলো তাদের দেখে থামতে বলে তারা দ্রুত চলে আসার চেষ্টা করছিলো। সেই সময় সিহাব ও মেয়েকে নাকি থাপ্পর মেরেছে। এতে করে তো মারা যাওয়ার কথা না। বাইক দুর্ঘটনার কথা বলা হচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে দুর্ঘটনার চিহৃ থাকবে বা শরীরে ময়লা থাকবে সেটাও নাই। সাথে যে মেয়ে ছিলো সে মতিহার থানা হেফাজতে আছে ওই মেয়েকে সব জিজ্ঞাসা করলে সকল কারণ বের হয়ে আসবে। এলাকাবসী দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের সহযোগিতায় মৃত্যুর বের করার দাবি জানান।
মতিহার থানা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিঠুন রহমান বলেন, যে হত্যা কান্ডটা হয়েছে সে মতিহার থানা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় হত্যা কান্ডটা হয়েছে।এটা পরিকল্পিত হত্যা কান্ড হতে পারে। আমরা এই হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তদন্ত করে আসল রহস্য উৎঘাটনের দাবি জানান।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে রাত ১১টার দিকে একটি ছেলেকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলা হচ্ছিল। পরে জেরার মুখে মারামারি করে মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। তাঁর শরীরের বাইরের অংশে মেজর কোনো ক্ষতের দাগ পাওয়া যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে রাস্তার কাজের সাব ঠিকাদার রনি আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত নাইট গার্ডের বরাত দিয়ে জানান, রাতের ঘটনায় ওই ছেলের সাথে একটা মেয়ে ছিলো। ওদিকে কি যেনো করছিলো। ছাত্ররা ব্যাডমিন্টন খেলছিলো তাদের দেখে ধাওয়া করে। এসময় তারা দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে আসছিলো। রাস্তায় কাজ হচ্ছে। রডের সাথে বেধে পড়ে গিয়েছিলো। তাদের কেউ মেরেছিলো কিনা জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ড. আখতার হোসেন মজুমদার বলেন,ম ‘ আমরা যতদুর জানতে পেরেছি আমাদের প্রক্টরিয়াল বোর্ডের যে টহল টিম থাকে। তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য ঘটনাস্থলে যায়। তারা দুর হতে টর্চ লাইট মারছিলো। এসময় তারা ভয় পেয়ে দ্রুত বাইক নিয়ে রাস্তার কাজে রড বিছানো ছিলো তারা তার উপর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। তারা তখন পড়ে গিয়েছিলো। সেখানে তার ব্রনে আঘাত লাগতে পারে। এটা তদন্ত রিপোর্টে জানা যাবে। যতদুর জানি প্রক্টরিয়াল বডির সাথে তাদের দেখা হয়নি। ছাত্ররা খেলছিলো তারা এসে দ্রুত উদ্ধার করেছে। যেহেতেু ক্যাম্পাসে মৃত্যু হয়েছে সেজন্য অবশ্যই তদন্ত করা হবে। থানা প্রশাসন দেখবে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে সবকিছু পরিষ্কার হবে। বিশ্ববিদালয়ের নিয়ম অনুসারে আমরা বিষয়টি বের করার চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সালমা সুলতানা আলম বলেন, রাতে শিমুল ইসলাম সিহাব (১৯) নামের একজন তার গার্ল ফেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলো বলে জানতে পেরেছি। সেখানে বাইক যোগে দ্রুত চলে যেতে রাস্তার রডে লেগে পড়ি গিয়েছিলো। পরে তার মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু নিয়ে নানান বিষয় শোনা যাচ্ছে। আমরা সেটা সঠিক তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। ময়না তদন্ত পেলে সঠিক কারণ জানা যাবে। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। পরিবার থেকে অভিযোগ দেওয়া হবে বলে জেনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :