গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমী অন্যতম বৃহৎ একটি বাজার। সপ্তাহের বুধবার হাটের দিন। এটি বরমী বাজার শীতলক্ষ্যা খেয়া ঘাটের ত্রিশ বছরের ইতিহাস বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শ্রীপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে হাটের অবস্থান। গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, এই হাটে শুধু সবজি কেনাবেচা হচ্ছে। বছরের শুরুতে বিশেষ করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী ও মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই তিন মাস সপ্তাহের হাটবারে প্রচুর স্থানীয় সব্জী বেচাকেনা হয়। প্রতি হাটে ১০ লাখ টাকার সব্জী কেনাবেচা হয়।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা এবং বিশেষ করে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও, পাগলা, টাঙ্গাবোসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা পণ্যের আমদানি ঘটে। হাটবার সব্জী আমদানি ও বেচাকেনার সাথে প্রায় দুই’শ শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন। কৃষকদের দাবী বর্তমান বাজারে সব্জীর মুল্য কিছুটা কম। ফলে যেসব কৃষকের জমিতে দেরীতে ফলণ এসেছে তাদের উৎপাদন খরচ উঠাতে কিছুটা হিমশিম খেতে হবে। আর যারা শুরুর দিকে ফলন পেয়েছেন তারা লাভবান।
শীতকালীন সব্জী টমেটো, আলু, বাঁধা কপি, শীম, কাঁচ কলা প্রভৃতির বিপুল সরবরাহ বরমী বাজারের প্রতি বুধবারের দৃশ্য। ইদানীং শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় স্ট্রবেরী, বুকলীর চাষ হয়। বিদেশী এসব ফল ফসলের আমদানিও হয় বরমী বাজারে। গত বেশ কয়েকটি হাটে টমোটে এবং আলুর আমদানি ঘটেছে সবচেয়ে বেশি।
বেচাকেনার সাথে জড়িত কৃষক, আড়তদার, স্থানীয় অধিবাসী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারে একদিনে কমপক্ষে ৪২ হাজার কেজি সব্জী বেচাকেনা হয়। সপ্তাহের প্রতি বুধবার এ বাজারের হাটের দিন। যত সব্জী আমদানি হয় তার সবগুলো আসে পাশর্^বর্তী ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও, পাগলা, টাঙ্গাবোসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও এসব সব্জী আমদানি হয়।
গত বেশ কয়েকটি হাটে টমোটে এবং আলুর আমদানি ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। বাজারের সকল প্রকার সব্জী বিষমুক্ত বলেও দাবী করেন সংশ্লিষ্টরা। হাটবার ভোর ৫টা থেকেই সব্জী আসতে থাকে শীতলক্ষ্যা খেয়া ঘাটে। সকাল ৮টা থেকে পাইকারি বেচাকেনা শুরু হয়। চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। এরই মধ্যে বরমী খেয়াঘাট সব্জীশূণ্য হয়ে পড়ে।
প্রতি হাটে কমপক্ষে ৬টি ট্রলারে এসব পণ্য আসে। প্রতি ট্রলারে কমপক্ষে ১’শ খাঁচায় পণ্যগুলো ভর্তি থাকে। প্রতি খাঁচার গড় ওজন হয় ৭০ কেজি। সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কেজি কাঁচা এসব সব্জীর সমারোহ ঘটে বরমী বাজারে। আশপাশের হাটগুলোর খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারী মূল্যে এসব পণ্য কিনে নিয়ে যান।
খুচরা বিক্রেতা জব্বার মিয়া বলেন, দেড়’শ শ্রমিক মালামাল উঠানোর কাজ করেন। সপ্তাহে একদিন (বুধবার) মাল বিক্রি করেন তিনি। সব মিলিয়ে লাখ টাকার মাল বিক্রি হয়।
সব্জী শ্রমিক আবু সাঈদ বলেন, প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে বিরতিহীনভাবে ১২ টা পর্যন্ত মাল উঠানামর কাজ করি। কোনো কোনো দিন এক হাজার, আবার কোনো কোনোদিন দেড় হাজার টাকাও পাওয়া যায়। বরমী খেয়া ঘাটে হাটে শ্রমিকের কাজ করেই সংসার চালাতে হয়।
কৃষক চাঁদ মিয়া বলেন, ২০ বছর যাবত কৃষি কাজ করছি। বরমী বাজারে ১৫ বছর সপ্তাহে বুধবার কাঁচা সব্জী নিয়ে আসছি। বিক্রি করছি, জমি থেকে আবার নিয়ে আসছি। একেক সপ্তাহে একেক সংখ্যক কাঁচা সব্জীগুলো আসে। আমরা বরমী বাজারের আড়তে বিক্রি করি। অন্যান্য বছর থেকে এবছর বিক্রি ভাল। আমরা লাভবান, বাজার বিক্রি ভাল। শীমের খাঁচায় ৭৫ কেজি, আলু ৭০ কেজি, টমেটোর খাঁচায় ৮০ কেজি মাল ধরে।
বরমী বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, বরমী বাজার খেয়াঘাটে ভোরের সব্জী বাজারে ত্রিশ বছর যাবত সব্জী বেচাকেনা হচ্ছে। আমার বাবা আগে করতেন। এখন আমার বাবার ব্যবসা আমিই পরিচালনা করছি।
কৃষক কামাল হোসেন ও ইব্রাহীম বলেন, আমরা কৃষি কাজ করি ২০ বছর যাবত। এবার উৎপাদন ভালো। কিন্তু, দাম এখন কিছুটা কম। টমেটো বিক্রি করি তিন মাস। অন্যান্য সময় ঝিঙ্গা, করলা, চিচিঙ্গাসহ অন্যান্য সব্জী বিক্রি করি। সারা বছর সব্জী বিক্রি করি। ৮জন কৃষক একটি ট্রলার ভাড়া করি। মালের ওপর নির্ভর করে পরিবহন ভাড়া। পানি পথের কারণে পরিবহন খরচ তুলনামূলক কম।
বরমী বাজারের আব্দুল কাদির বলেন, সপ্তাহের প্রতিদিন এ ঘাটে সব্জী বেচাকেনা হলেও বুধবার বেচাকেনা বেশি হয়। মালামালের আমদানি বেশি হয়। সব মিলিয়ে এ হাটে খেয়া ঘাটে গড়ে ১০ লাখ টাকার কাঁচা সব্জী বেচাকেনা হয়। এখানে যেসব মাল আসে সব মাল বিষমুক্ত।
বরমী গালর্স স্কুল এলাকার বাসিন্দা এবং বরমী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নূরুল আমীন বলেন, বরমী বাজারের ইতিহাস অনেক প্রচীন। এটি গাজীপুর জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। মোঘল আমল থেকে এ বাজারের প্রসার ঘটেছে। প্রতি হাটের দিনে (বুধবার) শীতলক্ষ্যার পাড়ে জমে উঠে সব্জীর আড়ত। ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও পাগলা এলাকা থেকে এসব সব্জী আসে বরমীর শীতলক্ষ্যার খেয়া ঘাটে। এ বাজারে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাইকারী বেচাকেনা হয়। বাজারের দৃশ্য দেখার জন্য দূর দুরান্ত থেকে অনেক লোক আসেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :