মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের বিকল্প হিসেবে গোবরের লাঠির চাহিদা বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে গোবর লাঠিতে পেঁচিয়ে শুকিয়ে সারা বছর ব্যবহার করা যায় এই লাঠি।
গতকাল শনিবার (২৫ জানুয়ারী) বিকালে উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের জালালিয়া গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে নারী অবসর সময়ে শলাকা, গৈঠা বা ঘুটে তৈরি করছেন। উপকরণ তৈরির আগে পরিমাপ মতো পাটখড়ি বা লাঠি কেটে গোবর ও ধানের তুষ (গুড়া) একসঙ্গে মিশিয়ে পাটখড়ি বা লাঠির গায়ে মুষ্ঠিতে এঁটে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গোবরের লাঠি তৈরি করা হয়। গরুর গোবরের সঙ্গে তুষ মিশিয়ে সেগুলো বাঁশের কঞ্চির সঙ্গে পেঁচিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় এই লাঠি।
গোবরে চটকে শুকনো চিকন ২-৩ ফুট লম্বা লাঠি বা পাটখড়ির গায়ে মুন্ড হাতে মুষ্ঠিতে লাগিয়ে শলাকা গৈঠা বা ঘুটে তৈরি করা হয়। এসব তৈরিকৃত কাঁচা শলাকা, লাকড়ি, গৈঠা গুলো শুকানোর জন্য বাড়ির উঠানে বা রাস্তার পাশে রোদে দাঁড় করে রাখা হয়। এটি ৫-৭ দিন রোদে শুকানোর পর জ্বালানির উপযোগী হয়। এভাবে নিত্যদিনের তৈরি শুকনো উপকরণ গুলো মজুদ রাখা হয়।
একসময় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ হাওরের বনাঞ্চল থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে নিজেদের চাহিদা মেটাতেন। দিন দিন বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় জ্বালানি কাঠের সংকট তীব্র হতে থাকে। এ ছাড়া বাজারেও জ্বালানি কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছে গ্রামের মানুষকে। তা ছাড়া গ্যাস কিনে ব্যবহার করাও সম্ভব নয় সবার পক্ষে। এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে গোবরের লাঠির প্রতি ঝুঁকছেন গ্রামের বাসিন্দারা।
উপজেলার জালালিয়া গ্রামের অর্মিলা মালাকার, কৃষ্ণ মালাকার ও সবিতা মালাকার বলেন, ‘একসময় মানুষ হাওর-বাঁওড়ের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে নিজেদের চাহিদা মেটাত। বর্তমানে হাওর-বাঁওড়ে কোনো ধরনের বন জঙ্গল নেই। এ ছাড়া বাজার থেকেও অতি উচ্চমূল্যে কাঠ সংগ্রহ করতে হয়। সিলিন্ডার গ্যাসের দাম হু-হু করে বাড়ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ রান্নার কাজে কাঠ কিংবা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করলেও নিম্নবিত্তদের বিপদ। তারা না পারে কাঠ কিনতে, না পারে গ্যাস ব্যবহার করতে।’
তাঁরা আরও বলেন, গ্রামের বউ-ঝিয়েরা সন্তানদের নিয়ে অবসর সময়ে তুষ কিংবা খড়ের সঙ্গে গোবর মিশিয়ে বাঁশের কঞ্চির সঙ্গে জড়িয়ে গোবরের লাঠি তৈরি করে ১০-১২ দিন রোদে শুকান। রোদে শুকানোর পর গোবরের গন্ধ চলে যায় এবং লাঠিগুলো রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। এগুলো তৈরিতে পরিশ্রম হলেও খরচ কম পড়ে। গোবরের লাঠি সারা বছর গোয়ালঘরে কিংবা যে কোনো শুকনো স্থানে মজুত করে রাখা যায়। ঝড়-বৃষ্টির দিনে প্রয়োজন মতো এগুলো দিয়ে চুলায় রান্না করা যায়।’
কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষক আলী মতূজা বলেন, ‘গ্রামীণ নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা বিভিন্ন মাঠ ও সড়ককের পাশ থেকে কাঁচা গবর তুলে এনে জ্বালানি উপকরণ তৈরি করছেন। এতে পরিত্যক্ত গোবরের অপচয় রোদ হচ্ছে এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যাপক ভুমিকা পালন করছে। পাশাপাশি এর পুড়ানো ছাই ফসলি জমিতে প্রয়োগ করলে মাটির ক্ষারতা হ্রাস পায় এবং জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :