AB Bank
ঢাকা রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মাটি লুট বন্ধে ‘কোনো মন্ত্রই খাটছে না’ মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই


Ekushey Sangbad
আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই, জয়পুরহাট
০৯:০৯ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
মাটি লুট বন্ধে ‘কোনো মন্ত্রই খাটছে না’ মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় ফসলি জমি ও পুকুরের উর্বর মাটি লুটপাটের মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা,মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, জরিমানা, ট্রাক্টর জব্দ কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কঠোর পদক্ষেপ-কোনো কিছুই যেন থামাতে পারছে না মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য। দিন-রাত নির্বিচারে চলছে জমির উর্বর মাটি লুট। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নির্বিঘ্নে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসন প্রভাবশালী মাটিখেকো চক্রের শক্তির কাছে একেবারেই অসহায়। এভাবে চলতে থাকলে কালাই উপজেলা কৃষি জমি এবং পরিবেশের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।কৃষকরা জেলা প্রশাসনের কাছে এবিষয়ে জোরালো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা—যে কোনো মৌসুমেই কালাই উপজেলার পুকুর এবং ফসলি জমির মাটি লুটে নিচ্ছে একটি শক্তিশালী চক্র।দিন-রাত ড্রেজার, ভেকু,ট্রাক্টরসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মাটি উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে।মাটি পরিবহনে সময় রাস্তা ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি মাটির কারণে সড়কগুলো পিচ্ছিল হয়ে অনবরত দুর্ঘটনা ঘটছে।অন্যদিকে, রাস্তার পাশের বাসিন্দারা ধুলাবালির অত্যাচারে অসহনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় কাজ করা চক্রটি সাধারণ কৃষকদের ভয় দেখিয়ে বা অল্প কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে জমি ও পুকুরের মাটি লুট করে নিচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী ১-২ ফুট গভীর মাটি কাটার কথা থাকলেও তারা ১০-১২ ফুট গভীর করে পুরো জমি খালি করে দিচ্ছে। এতে উর্বর মাটি হারিয়ে কৃষি জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

গত দুই বছরে কালাই উপজেলায় প্রায় ৬৩ হেক্টর ফসলি জমি চাষাবাদ থেকে বাদ পড়েছে।এর ফলে প্রতি বছর ৫৮ মেট্রিক টন ধান এবং ১৪৬ মেট্রিক টন আলুসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন কমে গেছে।কৃষকরা এখন হাত কামড়ে অনুতাপ করছেন, কিন্তু কিছুই করার নেই।মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরগুলোর কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ পাকা সড়কগুলো বেহাল দশায় পরিণত হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রাক্টরের শব্দে অতিষ্ঠ মানুষ। রাতের অন্ধকারে চলা এই মাটি লুটের কর্মযজ্ঞে ঘুমানো পর্যন্ত দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অনুমতি নিয়ে পুকুর সংস্কারের নামে মাটি লুট করা হচ্ছে। 

পৌর এলাকার কাজিপাড়া মহল্লার রুহুল আমিন তালুকদার সরকারি অনুমতি নিয়ে মাটি কেটে ইটভাটা ও নিম্নভূমি ভরাটের জন্য বিক্রি করছেন। একইভাবে আঁওড়া গ্রামের আব্দুল হাকিম,শালগুন গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, বেলগড়িয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম মন্ডলসহ আরও অনেকে এই সিন্ডিকেটের অংশ। তবে অনেকক্ষেত্রেই কোনো অনুমতি ছাড়াই রাতের আঁধারে লুট করা হচ্ছে মাটি।

ইমামপুর এলাকার কৃষক ছাইদুর রহমান বলেন, "মাটিখেকোদের অধিকাংশই স্থানীয় প্রভাবশালী। তারা জমির মালিকদের ভয় দেখিয়ে জমির মাটি লুটে নিচ্ছে। কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।"

মোলামগাড়ীহাট এলাকার কৃষক বকুল মিয়া বলেন, দিন-রাতে কৃষকদের পুকুর ও জমি লুট হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চক্রটি রাতের আঁধারে কাজ চালায়। যখন প্রশাসন আসে তখন কয়েক ঘণ্টার জন্য কাজ বন্ধ থাকে।কিন্তু শুক্র ও শনিবার অফিস বন্ধ থাকায় ওই দুই দিনে তাদের কার্যক্রম জোরদার হয়।"

কালাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাজ্জাদুর রহমান তালুকদার সোহেল বলেন, মাটি লুটের জন্য এ উপজেলায় শক্তিশালী চক্র তৈরি হয়েছে। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এ এলাকার কৃষি জমি এবং পরিবেশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।"

সরেজমিনে মাটিখেকোদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখ খুলতে নারাজ।তবে বেলগাড়িয়া গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম মন্ডল ও শালগুন গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যে মাটি কাটা হচ্ছে,তা কোনো ফসলি জমি নয়।আমরা শুধু নিচু জমি ভরাটের জন্য মাটি সরবরাহ করছি।এটা আমাদের ব্যবসা।স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকের সহযোগিতায় কাজ করছি। আমাদেরকে দিয়ে তারা কাজ করাচ্ছে।উপর মহল থেকে সব সিস্টেম করা হয়েছে,তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, মাটি কাটা বন্ধে আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছি। ড্রেজার, ভেকু এবং মাটি পরিবহনের ট্রাক্টর জব্দ করেছি।জেল- জরিমানাও করেছি। কিন্তু প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে এই চক্র বারবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। সামনে আরও জোরালো অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!