বাংলাদেশে উপেক্ষিত একজনগোষ্ঠীর নাম বেদে সম্প্রদায়। এরা বাইদ্যা নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে ভাসমান দেখা মেলে বেদে জনগোষ্ঠীর। সাপের ছোবল সামলানোর কৌশল আর শিঙ্গা লাগানোর কৌশল রপ্ত করলেও বেদেরা সভ্যতা ও শিক্ষার বালাই নাই তাদের মধ্যে। তারা আজ অস্তিত্ব সংকটে। নৌকায় এঘাট থেকে ওঘাট ছিল তাদের বসবাস, বর্তমানে সেখানেও তাদের দেখা মেলে না। যদিও তারা বাংলাদেশের নাগরিক তারপরেও তারা বাংলাদেশের অনেক কিছু থেকে তারা বঞ্চিত রয়েছে। তারা মুসলিম ধর্মের অনুসারী। সব মিলিয়ে নানা সমস্যা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তাদের জীবনযাপন চলে। কালের বিবর্তনে নদনদী খালবিলের পানি শুকিয়ে গেলে বেদে সম্প্রদায়ের নৌকায় চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঠিক সেই সময় ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ভাসমান নিরক্ষর বেদে শিশুদের আলোর পথ দেখালেন ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন।
কয়েকজন বেদে পরিবার ভাঙ্গা উপজেলার খাদ্য গুদাম সংলগ্ন সরকারি জায়গায় দীর্ঘ ১৮ থেকে ২০ বছর ধরে কয়েকটি বেদে পরিবার নৌকার ছাউনির মত এক মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন মোঃ মিজানুর রহমান শীতের রাতে তাদেরকে কম্বল বিতরণ করতে গেলে মানবতার জীবনযাপন দেখে নজরে পড়ে তার। তাড়া দেয় তার বিবেকে, খোঁজখবর নেন তাদের প্রতি। সেখান থেকে কুড়িয়ে ১১ জন শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে নিরক্ষর বেদে সম্প্রদায়ের শিশুকে আলোর মুখ দেখাতে ২ নং সদরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গলবার তাদের ভর্তি করে দেন, উপজেলা প্রশাসন বিদ্যালয় এর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বেদে শিশুদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন, হাতে তুলে দিলেন বই খাতা কলম সহ স্কুলের ড্রেস। বৈষম্য দূর করতে তাদের সঙ্গে সঙ্গ দেওয়া ও খেলাধুলা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা, শিক্ষার সামগ্রী সহ সকল দায়িত্ব নিলেন উপজেলা প্রশাসন ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান।
তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সার্থকতা তখনই হবে যখন তাদেরকে হাতে কলমে শিখিয়ে শিক্ষিত করা হবে। তা না হলে ফুল দিয়ে বরণ করা, আর গল্প করা এসবই বৃথা হয়ে যাবে। তাই আমি শিক্ষকদেরকে বেদে শিশুদের ধৈর্য সহকারে হাতে খড়ি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান সেই সাথে স্কুলের সহকারী শিক্ষকের সহযোগিতার জন্য আলাদা করে একজন প্রাইভেট শিক্ষক নিয়োগ করে দেন। পড়াশোনা উন্নতি দেখাতে পারলে শিক্ষকদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেন উপজেলা প্রশাসন। বেদে শিশুদের পরিবারদেরকেও আশ্বস্ত করলেন কাজ দেওয়ার। এতে বেদে সম্প্রদায় বেজায় খুশি।
এ বিষয়ে বেদে গোষ্ঠীর সরদারিনী শাহিনুর বেগম জানান, আমরা বেদে সম্প্রদায় সমাজের মধ্যে নিচু শ্রেণীর লোক মনে করে আমাদেরকে।আমাদের সঙ্গে সমাজের মানুষ মিশতে চায় না, সেখানে ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন আমাদের দায়িত্ব নিয়েছেন, আমাদের শিশুদেরকে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, বৈষম্য দূর করে আমাদেরকে সাথে নিয়েছেন, এইজন্য উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
এদিকে ভাঙ্গা ২ নং সদরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ইয়াসমিন আক্তার ববি জানান, বেদে শিশুদের লেখাপড়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এদিকে উপজেলা প্রাইমারি শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রয়োজনে অবহেলিত বেদে শিশুদের জন্য একজন শিক্ষক আলাদা করে দেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :