মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে ষাটোর্ধ্ব জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য নির্মিতব্য দেশের প্রথম বিশেষায়িত মেডিকেল রিসোর্ট ‘অবসর-আমার আনন্দ ভুবন’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রায় ১০-১২ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রকল্পটি স্থবির হয়ে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণাধীন কাঠামোর লিন্টার ও রড চুরি হয়ে যাচ্ছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি আধুনিক বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। প্রবাসী অধ্যুষিত বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের নিঃসঙ্গ প্রবীণদের কথা মাথায় রেখে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রকল্পটি করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০১ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ৫.৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তখন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি টাকা।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও ভূমি উন্নয়ন করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৮ সালে প্রকল্পটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং এটি আধুনিক মেডিকেল রিসোর্ট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গৃহীত হয়।
২০১৭ সালে দরপত্র আহ্বান করা হলে রাজধানীর ‘চারুতা প্রাইভেট লিমিটেড’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কার্যাদেশ পায়। এরপর ২০১৮ সালের মার্চ মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখানে ১৬টি ভবন নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে থাকবে ১০টি ডুপ্লেক্স ভবন, ৫০ শয্যার হাসপাতাল, পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল, চিকিৎসকদের জন্য আবাসন, পাঠাগার, ওয়াকওয়ে, বাগান, ফোয়ারা, খেলার মাঠ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ‘মেইন ব্লক’ ও ‘ক্লিনিক’ নির্মাণ সম্পন্ন করে উদ্বোধনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে কাজ আবার শুরু হলেও কিছুদিনের মধ্যে তা পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর পৃথিবী পাল জানান, কাজ বর্তমানে বন্ধ থাকলেও এর কারণ সম্পর্কে তিনি অবগত নন। প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শোয়েব আহমদ চৌধুরী জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে, তবে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের এ বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে এবং এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘ ৮ বছরেও প্রকল্পটি সম্পন্ন না হওয়ায় এটি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তারা দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :