AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার মাটি ও ছনের ঘর


Ekushey Sangbad
পারভেজ আহমেদ, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
০৯:১২ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার মাটি ও ছনের ঘর

গ্রামবাংলার মাটি ও ছনের ঘর

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটি ও ছনের ঘর। মাটি ও চনের  ঘরের স্থান দখল করে নিচ্ছে ইট-পাথরের দালান ও টিন। শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই মাটির ও চনের ঘর আরামদায়ক। গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্যের নিদর্শন  ছায়া ঘেরা শান্তির নীড় ছিল মাটিও ছনের ঘর। যা এক সময় গ্রামের মানুষের কাছে ‘গরীবের এসি বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিলো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের মাটির ঘর। আধুনিকতার ছোঁয়া মাটির ঘরের জায়গায় তৈরি হচ্ছে  ইটের বাহারী দালান।

অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, রুচিবোধের পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের সুরক্ষার কারণে এখন আর কেউ মাটি ও ছনের ঘরে থাকতে চান না। সচ্ছল মানুষরা এখন ঝুঁকে পড়েছেন পাকা দালানের দিকে। তারপরও মানুষ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাকা দালান কোঠা তৈরি করছেন। তাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের পরিবর্তনে গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি ঘর আজ প্রায় বিলুপ্তের পথে।

একদিন সেই মাটিও ছনের ঘরটির স্থান হবে ইতিহাসে অথবা যাদুঘরে। সময়ের তালে ও মানুষের আর্থিক সামর্থ্য আর রুচির পরিবর্তনের ফলে গ্রাম থেকে হারিয়ে যাইতেছে এ মাটি ও ছনের ঘর।

ছবি: কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা বাগানগুলোতে এখনো কিছু মাটির ঘর দেখা যায়। তবে সেগুলোও বেশি দিন থাকবে না। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বাগানগুলোতেও। কম-বেশি সব বাগানগুলোতে দালানকোঠা  তৈরী হইতেছে। কারন যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এখন অনেকে ইটের ঘর তৈরি করছে, তাই ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে এমন মাটির ঘর। আমাদের ছেলে মেয়েরা বাস্তবে মাটিও চনের  ঘর যেন দেখতে পারে তাই সখ করে গ্রামে কিছু রেখে দিয়েছে অনেকে। তাও বিরল। তবে এখন মাটিও সনের ঘরের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিলুপ্তির কাছাকাছি। হয়ত সে দিন খুব বেশি দূরে নয় যে দিন মাটির ঘরের কথা মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্মের মানুষের কাছে মাটি ও চনের  ঘর রূপকথার গল্পের মতো মনে হবে।

এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আলীনগর চা বাগানে গেলে দেখা যায়, চা বাগানের বিভিন্ন টিলায় এখানো মাটির ঘর আছে। চা শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে আরামদায়ক ভাবেই বসবাস করছেন। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না থাকায় আধুনিকতার ছোঁয়াও লাগেনি তাদের মাঝে। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের তুলনায় এখন মাটির ঘর খুব কম। হয়তো সেটাও থাকবে না। হয়ে যাবে দালান কোঠা। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ছেলে-মেয়েরা মাটির ঘরের গল্প, কবিতার ছন্দে বা সাহিত্যর পাতায় বা যাদুঘরে দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কাছে শুধু নাটক, সিনেমা ও গল্প কাহিনী রয়ে যাবে।

মাটির ঘরের কারিগর দুলাল, রইছ ও কনু মিয়া বলেন, ‘মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের তিন-চার মাসের অধিক সময় লাগতো। মজুরি হিসেবে একটা ঘরের জন্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা নিতেন। এখন আর মাটির ঘর কেউ নির্মাণ করে না। তাই আমাদেরও আগের মতো কাজ নাই। এখন অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি।’

ছবি: কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি-১

মাধবপুর চা বাগানের বাসিন্দা অজয় মুন্ডা জানান, ‘মাটির ঘর বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের বিবর্তনে অধিকাংশ মানুষ মাটির ঘর ভেঙে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় অনেক লোকের বসবাসের জন্য ইটের ঘরকে প্রথম পছন্দের তালিকায় নিয়ে আসছে। তিনি বলেন, মাটির ঘর শীত গরম উভয় মৌসুমে বেশ আরামদায়ক।’

এদিকে আলীনগর চা বাগানের বাসিন্দা ও শিক্ষক রাজেস কৈরী বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা মাটির ঘরে বসবাস করছি। আমাদের তেমন টাকা পয়সা নাই পাকা ঘরে থাকবো যে। আরামের জন্য মাটির ঘরই ভালো্। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের বাগানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘর। মাটির ঘরগুলো বন্যা ও ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষ ক্ষতি হয় বলেই মানুষ ইট সিমেন্টের ঘরবাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতি বছর মাটির ঘরে খরচ না করে একবারে বেশি খরচ হলেও পাকা ঘরবাড়িই নির্মাণ করছেন। তবে এখন মাটির ঘরের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিলুপ্তির কাছাকাছি।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!