এক সময় সাধারণ মানুষের কাছে ধুমপানের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় ছিল এই হুক্কা। যার প্রচলন এখন দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর আগেও আবহমান বাংলার গ্রাম-গঞ্জে ধুমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যামে তামাকপানের নেশায় অভ্যস্ত ছিল। সে সময় ধনী-গরীব প্রায় সকলের বাডিতেই হুক্কার প্রচলন ছিল। হুক্কার ব্যবহার এখন আর দেখা যায় না।
এক সময়ের ধূমপানের অন্যতম অনুষঙ্গ ‘হুঁকা’ বা হুক্কা কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। এখন শহর দূরের কথা, গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও পাওয়া যায় না হুঁকার দেখা। কালের বিবর্তনে অনেকটা হারিয়ে গেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হুঁক্কা।
হুঁকা বা হুক্কা হলো- কলকেয় রাখা জ্বলন্ত তামাকের ধোঁয়া (ধাতবপাত্রের সঞ্চিত জলের মধ্য দিয়ে শোধিত) সেবনের জন্য ব্যবহৃত দীর্ঘ নলযুক্ত সরঞ্জাম, আলবোলা, ফরসি। নারকেলের খোলে সঞ্চিত জলে শোধিত করে কলকেয় রাখা তামাকের ধোঁয়া সেবনের সরঞ্জামবিশেষ, ডাবা।
তিন-চার দশক আগেও বাংলার গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুঁকার মাধ্যমে তামাকপানের নেশায় ছিল অভ্যস্ত। সে সময় দেশের প্রায় সব বাড়িতেই ছিল এর প্রচলন। তখনকার দিনে গ্রাম্য সালিশ, সামাজিক অনুষ্ঠান বা জমায়েতে ছোটবড় সবাইকে হুঁকায় আপ্যায়নের রীতি ছিল। প্রতিটি গ্রামের প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী বাড়িতে লম্বা পাইপযুক্ত স্ট্যান্ড হুঁকা ওই বাড়ির শোভাবর্ধন ও প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করত। বর্তমান প্রজন্মের কাছে হুঁকা একটি অপরিচিত বস্তু। এটি খাওয়া দূরের কথা, চোখেই দেখেনি তারা।
বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ হুঁকার জায়গায় বাজার দখল করেছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নিকোটিনযুক্ত সিগারেট-বিড়ি। প্রজন্মের একটা বড় অংশ নিষিদ্ধ মাদকের নেশায় মাতোয়ারা। অথচ কম নিকোটিনযুক্ত হুঁকার প্রচলন থাকলে যুবসমাজকে মাদক গ্রহণের অধঃপতন থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা যেত।
প্রাচীন বয়স্ক ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে তারা জানান ‘তিন-চার দশক পূর্বেও আমাদের বাপদাদারা তিন বেলা খাবার খেতে ততটা আগ্রহী হতেন না যতটা আগ্রহী ছিলেন হুক্কা টানায়। এ ছাড়া তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন কল্পনাও করা যেত না। ঘরে চালডাল না থাকলেও যথেষ্ট পরিমাণে জমা থাকত হুক্কার তামুক। তামাকপাতা টুকরা টুকরা করে কেটে এনে এতে চিটাগুড় মিশিয়ে তৈরি করা হতো বিশেষ এ তামুক। এতে নিকোটিনের পরিমাণ অনেক কম থাকে। যতটুকু নিকোটিন থাকে তা নারকেলের টোলে থাকা পানিতে মিশে যায়।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :