গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের পাতিলঝাপা গোপালপুর সড়ক নির্মানে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের সতত্যা প্রমানিত হওয়ায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তৎকালিন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম ডুমুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আলী আহম্মেদ ও সদস্য কবির তালুক দারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক গোপালগঞ্জ। বুধবার (১৯ ফব্রুয়ারি) দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক আল আমিন ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।।
দুদক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়-অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে এনফোর্সমেস্ট অভিযান পরিচালনা করে প্রাপ্ত তথ্য, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যানুসন্ধানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ২,৭৪,৫০,০০০/- টাকা ব্যয়ে ২১ নং প্রকল্প “চর গোপালপুর ওয়াবদা রাস্তা হতে পাতিলঝাপা অনন্ত বৈদ্যর বাড়ি হয়ে ভেন্নাবাড়ি বৈদ্যবাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং করণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে মর্মে দেখানো হয়। বিগত ০৩-০৬-২০২৪ তারিখ হতে ১২-০৬-২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ২১৬০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ১ম বিল বাবদ মোট ১,৩৭,২৫,০০০/- টাকার বিল উত্তোলন করা হয়। অত:পর ১৩-০৬-২০২৪ তারিখ হতে ১৭-০৬-২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ২১৬০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ২য় বিল বাবদ মোট ৬৮,৬২,৫০০/- টাকার বিল উত্তোলন করা হয়। ১৮-০৬-২০২৪ তারিখের পর আরও ৫দিন ৫৯০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে বিগত ২৪-০৬-২০২৪ তারিখে ৩য় ও চূড়ান্ত বিল বাবদ মোট ৬৮,৬২,৫০০/- টাকাসহ সর্বমোট (১,৩৭,২৫,০০০ + ৬৮,৬২,৫০০ + ৬৮,৬২,৫০০) = ২,৭৪,৫০,০০০/- টাকা উত্তোলন করা হয়। বিগত ২৪-০৬-২০২৪ তারিখে কাজ সম্পন্ন করে ২,৭৪,৫০,০০০/- টাকা উত্তোলন করা হলেও ৫০,০০,০০০/- টাকার প্যালাসাইডিং কাজের মধ্যে ৩৪,৩১,২৫০ টাকার কাজ না করায় উক্ত টাকা ৩০-১০-২০২৪ তারিখে সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে ১-৪৯০১-০০০১-২৬৭১ কোডে জমা করা হয়। বিগত ২৪-০৬-২০২৪ তারিখে বরাদ্দকৃত সমূদয় ২,৭৪,৫০,০০০/- টাকা উত্তোলন করা হয়। অত:পর মাস্টার রোলের সাথে সমন্বয় করে বিগত ৩০-১০-২০২৪ তারিখে ৩৪,৩১,২৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। অর্থাৎ কাজ না করেও বিল উত্তোলন করে প্রায় ৪ মাস ৩৪,৩১,২৫০ টাকা সাময়িক আত্মসাৎ করা হয়েছিল মর্মে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় আরও দেখা যায় যে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৪৭,২২,০০০/- টাকা ব্যয়ে ২৩ নং প্রকল্প “পাকুরতিয়া পান্না শেখ এর বাড়ি হতে ছোট ডুমুরিয়া দেবেন মন্ডলের বাড়ির নিকট এইচবিবি রোড পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং করণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে মর্মে দেখানো হয়। বিগত ০৩-০৬-২০২৪ তারিখ হতে ১২-০৬-২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ২৫০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ১ম বিল বাবদ ২৩,৬১,০০০/- টাকা ও চূড়ান্ত বিল বাবদ ২৪-০৬-২০২৪ তারিখে ১১,৮০,৫০০/- টাকাসহ মোট ৪৭,২২,০০০/- টাকার বিল উত্তোলন করা হয়।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় আরও দেখা যায় যে, শ্রমিক দ্বারা উক্ত কাজ ২টি করানো হয়েছে মর্মে দেখিয়ে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুত করে নথিতে রেখে বিল প্রদান করা হলেও প্রকৃতপক্ষে পরিবেশের ক্ষতিকারক ড্রেজার দ্বারা কাজ করানো হয়েছে। কাবিটা নীতিমালায় ড্রেজার দ্বারা কাজ করানোর কোন নিয়ম না থাকার পরও ড্রেজার দ্বারা সম্পন্ন করিয়ে রাস্তায় বালু ফেলা হয়েছে। ফলে রাস্তাটি মানুষের চলাচলের উপযোগী হয়নি। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-খাদ্যশস্য/নগদ টাকা) কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা-২০২১ এর ০১ নং অনুচ্ছেদে উক্ত কর্মসূচির উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে- গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিযোজনে সামাজিক ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তার জনা- (১) গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি; (২) গ্রামীন দরিদ্র জনগনের আয় বৃদ্ধি; (৩) দেশের সর্বত্র খাদ্য সরবরাহের ভারসাম্য আনয়ন; (৪) দারিদ্র্যমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি এবং (৫) গ্রামীণ এলাকায় শহরের সুবিধা প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সামগ্রিকভাবে জীবনমান উন্নয়ন। কিন্তু বাস্তবে উক্ত প্রকল্প ২টিতে বর্র্ণিত উদ্দেশ্য ব্যহত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
প্রকল্প ২টি সরেজমিন পরিমাপ গ্রহণ করা হলে দেখা যায় ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে রাস্তা তৈরী করায় সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী নেই। অর্থাৎ রাস্তায় বালির পরিমান বেশি ও মাটির পরিমান অত্যাধিক কম। ড্রেজার দিয়ে বালু পরিবহন করায় দূরে থেকে শ্রমিক দিয়ে মাটি আনার খরচ লাগেনি। কিন্তু উক্ত খাতে বিল বাবদ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। অতিরিক্ত লিড, ম্যানুয়েল কম্পেকশন, লেভেলিং, ড্রেসিং, ক্যাম্বারিং, পার্শ্ব ঢাল ঠিক করণ, শক্ত, কাদা, বালি মাটির জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বাবদ বিল উত্তোলন করা হলেও রাস্তায় উক্ত কাজসমূহ করার তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বর্ণিত আসামীগণ অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ না করে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুতপূর্বক দাখিলের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করত: অর্থ উত্তোলন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- রাস্তা নির্মানে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি তারা করেন নি তবে রাস্তাটি বিলের ভিতর দিয়ে নির্মিত হবার কারনে সেখানে মাটির অভাব থাকায় কিছু জায়গায় তারা বালু ব্যাবহার করেছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :