দলীয় পদ না থাকলেও একসময় ছিলেন বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নেতাকর্মীদের সহায়তায় হয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে পরিবর্তন করেন রাজনৈতিক খোলস। ঘোষনা দিয়ে যোগদান করেন আওয়ামী লীগে। সকল সুবিধা নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে আবারও রাজনৈতিক খোলস পাল্টে হয়ে গেছেন বিএনপি’র নেতা। বলছি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হক বাচ্চুর কথা।
জানা যায় , নুরুল হক বাচ্চু গোপদিঘী ইউনিয়নের গোপদিঘী গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে। তার বাবা বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে বাচ্চু বিএনপি’র রাজনীতি করতেন। সেই সুযোগে নেতাকর্মীদের সমর্থন ও সহযোগীতা নিয়ে হয়ে যান চেয়ারম্যান। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও তার ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিকের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়। মিঠামইন ডাকবাংলোতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হক নুরু ও সাবেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিকের হাতে আওয়ামী লীগের বায়াত গ্রহণ করেন। যোগ দেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিগত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান। নির্যাতন করেন বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আবারও খোলস পাল্টে যায় নুরুল হক বাচ্চুর। দৌড়ঝাপ শুরু করেন বিএনপিতে যোগদান করতে। সেই পথে হাঁটতে বিএনপি’র বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখা যায় নুরুল হক বাচ্চুকে। বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন হওয়ার জন্য বিএনপি নেতাদের ফুল দিয়ে বরণ করতেও ভুল করেননি তিনি। বর্তমানে নিজ উপজেলা ও ইউনিয়নে বাচ্চু এখন বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা। কারণ, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাসা, চেম্বারে নিয়মিত যাতায়ত রয়েছে তার। শুধু তাই নয় ওইসব নেতাদের মিটিং কিংবা মিছিলে বাচ্চুর পক্ষ থেকে মোটর সাইকেল শোডাউন ও লোকজন পাঠিয়ে মিটিং জমজমাট করেন তিনি। এ কারণ ক্ষুব্ধ স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।
গোপদিঘী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি নজু মিয়া মেম্বার বলেন, নুরুল হক বাচ্চু একসময় বিএনপি করতেন, একবার চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। বিএনপি করার সময় ফুলের মালা নিয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাবেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিকের হাত থেকে গলায় মালা নিয়েছেন। যোগদান করার পর একটি নির্বাচনে বিএনপি’র প্রতীক ধানের শীষের পোষ্টার গুলো ছিড়ে ফেলেছিল বাচ্চু। এখন আবার দাবি করছে সে বিএনপি করে। সে সুবিধাবাদী লোক। সে এখন বিভিন্ন পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে যাচ্ছে। এলাকায় তার কোন রাজনৈতিক মূল্যায়ন নাই। তার লোকজন নিয়ে বিভিন্ন নেতাদের প্রোগ্রামে যাচ্ছে। প্রভাব কাটানোর চেষ্টা করছে। তাকে দলে নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমরা চাই কোন নেতার কাছে যেন সে যেতে না পারে।
মিঠামইন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিএনপিতে আসার কোন সুযোগ নাই। নুরুল হক বাচ্চু আওয়ামী লীগের লোক। সে এখন বিএনপি দাবী করে এবং বিএনপি নেতাদের নামে না-না রকম কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে সে বক্তব্য রেখেছে। ১৬ বছর যারা বিএনপি করেছে তাদের বাইরে কাউকে দলে রাখা যাবে না। বিশেষ করে যারা আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসতে চাই তাদের ক্ষেত্রে প্রশ্নই উঠে না। সে পতিত আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপরতা চালাচ্ছে। তাকে দলে নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
নুরুল হক বাচ্চু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগে যোগ দেয়নি। এমনকি বিএনপি করার কারণে অনেক মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। যারা আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছে তাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত সমস্যা রয়েছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অনুষ্ঠানে গিয়েছি এসব অনুষ্ঠানে অনেকেই গেছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :