AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছরেও শহীদ মিনার হয়নি

ধনবাড়ীর ৯২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী শহীদ মিনারে  শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা


ধনবাড়ীর ৯২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী শহীদ মিনারে  শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও টাংগাইলে ধনবাড়ী উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও ভাষা শহীদের প্রতি ভালবাসার কোনো কমতি ছিলনা। শহীদ মিনার না থাকায় ভালবাসা ও সম্মান দিতে কলাগাছ দিয়ে তৈরি করেছিল শহীদ মিনার শিক্ষার্থীরা সেখানেই শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। 

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়াতে এতে ক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা খরচ করতে পারে কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণে তাদের বরাদ্দ থাকে না। দ্রুত উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার ২১ -২-২৫ মহান শহীদ দিবস পালিত হলেও এ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অর্থনৈতিক সংকট, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের আন্তরিকতার অভাব এবং প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি বলে এলাকাবাসির অভিযোগ করেছে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শহীদ মিনার নেই। এ উপজেলায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ একটি মহিলা ডিগ্রী কলেজ মিলে মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১শ ৮০ টি।

ধনবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানা যায়, ধনবাড়ী পৌরসভা ও ৭ ইউনিয়নে কলেজ ১৪ টি, স্কুল এন্ড কলেজ ১ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩ টি, দাখিল মাদ্রাসা ১২ টি, আলিম মাদ্রাসা ২ টি, ফাযিল ডিগ্রী মাদ্রাসা ১ টি, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫ টি এবং ২৬ টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছে ২৫ প্রতিষ্ঠানে। এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি ১১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। উপজেলায় ফাযিল ডিগ্রী ও দাখিল ১৫ টি মাদ্রাসা থাকলেও ১৪ টি মাদ্রাসায় আজ পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা ২৬ টি সহ কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫ টি’র মধ্যে কোন প্রতিষ্ঠানেও শহীদ মিনার নেই।

উপজেলা সদরের পৌর এলাকায় একমাত্র আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজও কোন শহীদ মিনার নেই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানা যায় , ধনবাড়ী পৌরসভা ও ৭ ইউনিয়নে ৮৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হলেও ১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তারা শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়ার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন।

জানা গেছে, সরকারী নির্দেশনায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠছে না শহীদ মিনার। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও   গড়ে উঠেনি শহীদ মিনার। শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি , ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদদের প্রতি উৎফুল্লভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। শিক্ষার্থীদের অনেক দুর দুরন্তে থেকে কলা গাছ ও বাঁশ সংগ্রহ করে বা অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হবে এমনটাই প্রত্যাশা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক,  ছাত্র-ছাত্রী ও  এলাকাবাসীর।

অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকার ফলে এই দিবসের  তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত রয়েছে শিক্ষার্থীর সহ এলাকার মানুষ। শহীদ মিনার না থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই প্রধানগণ বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। শহীদ মিনার না থাকায় আমরা অন্য কোন শহীদ মিনারে বা কলা গাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরী করে শহিদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে থাকি। সরকারী ভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী করছি জানান তারা। 

সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গন বলেন, শহীদ মিনার না থাকায় কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরী করে আমরা মাতৃভাষা দিবস সহ বিভিন্ন দিবস পালন করে আসছি। তারপরেও শিক্ষার্থীরা এই জাতীয় দিবসের তাৎপর্যটা সঠিক ভাবে জানতে পারছে না। শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সর্ম্পকে জানতে পরবে। তাই সরকারের কাছে দাবী করছি যাতে অতিদ্রুত  স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

ধনবাড়ী আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ: বারী বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্বেও অর্থ সংকটের কারণে কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারছি না। প্রশাসনের সহযোগিতা চাচ্ছি যাতে অতি দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেয়া হয়। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারী নির্দেশনা রয়েছে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য। অর্থনৈতিক সংকটসহ সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় শহীদ মিনার নির্মাণ হচ্ছে না। যে সকল প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই তার তালিকা করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই স্থানীয় উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণের তাগিদ দেয়া আছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাবুল হাছান বলেন, সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি। তবে, অনেক সময় বিদ্যালয়ের উন্নয়কাজের মধ্য থেকে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেয়া আছে। যত দ্রুত সম্ভব বাকী প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা শিক্ষা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ জানান, সরকারী ভাবে আলাদা কোন বরাদ্দ না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি। যে সব প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি প্রশাসন থেকে তালিকা সংগ্রহ করে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

একুশে সংবাদ/ এস কে

Link copied!