জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতের শীর্ষ ১০ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৩ বছর কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আজহারুল ইসলাম, তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আমি আহ্বান জানাই, দয়া করে তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। তাকে কারাগারে রেখে আমি আর বাইরে থাকতে চাই না।
তিনি বলেন, সরকারকে অনুরোধ করেছি- ২৫ ফেব্রুয়ারি আমি স্বেচ্ছায় নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে বলবো আমাকে গ্রেপ্তার করুন। আমাকে কারাগারে পাঠান। যেদিন আজহার ভাই মুক্তি পাবেন, পরদিন আমাকে মুক্তি দিয়েন। তাকে যদি মুক্তি না দেন, জামায়াতে ইসলামীকে সরাসরিভাবে দেশের ৩ কোটি মানুষ সমর্থন করে। এই তিন কোটি মানুষ জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জামায়াতের গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা জামায়াতের ব্যানারে এ আয়োজন করা হয়।
শফিকুর রহমান বলেন, ৫৪ বছরে এ বাংলাদেশের অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। দফায় দফায় রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছে। এই ৫৪ বছরে অনেক জনের শাসন আমরা দেখেছি। অনেক আদর্শের কথা আপনারা শুনেছেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইসলামের আদর্শের শাসন এখনো দেখার সুযোগ হয়নি। অতীতে সোনার বাংলা কায়েম করতে গিয়ে, শ্মশান বাংলা কায়েম করেছে। কোরআনই একমাত্র সোনার বাংলা কায়েমের গ্যারান্টি দিতে পারে। আর কেউই দিতে পারবে না। বাংলার জমিনে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ। এখন হবে ইনশাআল্লাহ কোরআনের বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ৫৩ বছর চলে গেল আমরা সত্যিকারের স্বাধীনতা পেলাম না। এর আগেও ৪৭ সালে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, তখনো পেলাম না। এখন ২৪ এ মানুষ বুক ভরা আশা নিয়ে, বুক পেতে দেওয়া গুলি নিয়ে মানুষ আশা করেছিল, যে ২৪ এর পরে সমস্যা, দুঃশাসন-দুর্নীতির অবসান হবে। আমরা মুক্ত হতে পারিনি। আমাদের সন্তানেরা একটি বিশাল স্বপ্ন নিয়ে তারা জীবন দিয়েছিল। আমাদের প্রিয় সন্তান বুক পেতে ডানা মেলে বলেছিল, বুকের ভেতরে তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। সেই ঝড়টা ছিল সমাজের অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি এবং দুঃশাসন। কোনো যুগেই যুবকরা কখনো দুর্নীতি এবং দুঃশাসনকে সমর্থন করে না। বরঞ্চ তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে, প্রতিবাদ করে, প্রতিরোধ করে, যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়। হয় শহীদ হয়, না হয় গাজী হয়। মাঝখানে আর কিছু নেই।
জামায়াতের আমির বলেন, এমন রাজনীতিকে ঘৃণা করি, যে রাজনীতি করতে গেলে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। এমন জীবন গঠন করি, যে জীবন সর্ব অবস্থায় আমাদের জন্য সম্মানের হয়। ফাঁসির রসিতে ঝুললেও যেন সম্মানের হয়। আবু সাঈদের মতো বুক পেতে গুলি নিলে সেটাও যেন আনন্দের হয়। রাজনীতিবিদদের জীবন এমন হওয়া উচিত। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি যারা করেন তারা কোন দলের কোন ধর্মের কোন প্রজাতির কোন গোষ্ঠীর এটি না দেখে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করবো, বন্ধুরা দয়া করে শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখান। আমাদের শহীদদের রক্তকে তোমরা অপমানিত করবা না। অপকর্ম ছেড়ে দাও। খাওয়ার অভাব হলে আমরা আশ্বস্ত করছি, আল্লাহ আমাদের যে নেয়ামত দিয়েছে সমস্ত মানুষ মিলে ভাগবাটোয়ারা করে খাব। তোমরা চাঁদাবাজি ছেড়ে দাও। দখল বাণিজ্য ছেড়ে দাও। তোমরা মানুষকে কষ্ট দিও না।
জেলা জামায়াতের আমির মাস্টার রুহুল আমিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও মো.ফারুক হোসাইন নুরনবীর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান ও ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর ফোরামের সভাপতি ডা. আনোয়ারুল আযিম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের সমাবেশ হয়েছিল। সেইদিন তৎকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযম প্রধান অতিথি ছিলেন। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর পর শনিবার লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জামায়েতের গণজমায়েতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :