মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত নারী আখি আক্তারের (২০) মৃত্যু দুর্ঘটনায় হয়নি। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমনটাই দাবি নিহতের পরিবারের। নিহত আখির বাবা মোঃ রাসেদ মুন্সি অভিযোগ, মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে পাঁচ্চর রেললাইনে দ্রুতগতির ট্রেনের সাথে ধাক্কা দিয়া ব্রীজের নিচে ফেলে দেয়।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নিহতের বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তাঁর স্বজনেরা। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে পাঁচ্চর এলাকায় ঢাকা থেকে ভাঙ্গাগামী একটি ট্রেনের ধাক্কায় এক নারীর মৃত্যু হলে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার পরদিন নিহতের ভাই মোঃ রাকিব মুন্সি রাজবাড়ী রেলওয়ে থানায় নিহত আখি আক্তারের স্বামী মোঃ হেলাল মুন্সি (৪৫) সহ তিন জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্ত মোঃ হেলাল মুন্সি উপজেলার বড়খাস বন্দরখোলা ইউনিয়নের রাজারচর জব্বর আলী মুন্সিকান্দি (কাজীরশুরা) এলাকার মৃত তোফাজ্জলের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পিতা মোঃ রাসেদ মুন্সি বলেন, হেলাল মুন্সি প্রায় নয় মাস পূর্বে আখী আক্তারকে প্রেমের প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে তুলে নিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর আমরা জানতে পারি হেলালের একাধিক স্ত্রী ও একাধিক সন্তান রয়েছে। এতে প্রথম স্ত্রী লতা বেগমের সাথে আখির প্রচুর ঝগড়া হত। এক পর্যায়ে আখিকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে এবং তালাক না দিলে তাঁকে হত্যা করে গুম করার হুমকী দেয় হেলাল ও লতা বেগম। এরপর হেলার তাকে শারীরিক নির্যাতন করে। এতে আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার চাইলে আখী আক্তারের উপর ক্ষিপ্ত হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে তাকে পাঁচ্চর এলাকার রেললাইনে ঘুরতে নিয়ে যায়। এতে পূর্ব পরিকল্পনা মতে সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ভাঙ্গাগামী একটি ট্রেনে ছুটে আসলে সুকৌশলে আমার মেয়ে আখি আক্তারকে দ্রুতগতির ট্রেনের সাথে ধাক্কা দিয়া ব্রীজের নিচে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের ভাই মোঃ রাকিব মুন্সি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ এসে আমার বোনের লাশ উদ্ধার করে অজ্ঞাতনামা হিসাবে ময়না তদন্ত করেন। এরপর পুলিশের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আমি ও আমার চাচা মোঃ লাবলু মিয়া ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে গিয়ে আমার বোনকে সনাক্ত করি। এরপর রাজবাড়ী রেলওয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। তাই এটা কোনো দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ছিল না। ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আসামিদের গ্রেফতার পূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।
এ বিষয়ে হেলাল মুন্সি পুলিশ হেফাজতে থাকায় তার কথা বলা যায়নি। বাকী অভিযুক্তদের বক্তব্য জানতে তাঁদের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মোঃ খায়রুজ্জামান সিকদার বলেন, এ ঘটনায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টার দিকে ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশন এলাকা থেকে প্রধান আসামী মোঃ হেলাল মুন্সীকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :