ভোজ্য তেল সংকট নিরসনে নারায়ণগঞ্জে ভোজ্য তেল কারখানার প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেছে জেলা প্রশাসক। সোমবার (৩রা মার্চ) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা সহ সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, টিকে গ্রুপ ও আবুল খায়ের গ্রুপের ভোজ্য তেল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, নিতাইগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শংকর সাহা, যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দাস উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানতে চাওয়া হয় রোজার শুরু থেকেই বাজারে বোতলজাত তেল কেন পাওয়া যাচ্ছে না। নিতাইগঞ্জের পাইকারী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বোতলজাত তেলের সরবরাহ নেই। বিভিন্ন গ্রুপগুলো কাদের কাছে তেল সরবরাহ করছে, কি পরিমান সরবরাহ করছে তা অজানা।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভোজ্য তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান,এই মুহুর্তে কাঁচামালের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং প্রতিদিন তেলের সরবরাহ করা হচ্ছে। ডিলার বা সাব ডিলাররা কোন কারসাজি করে থাকলে সেই বিষয়ে তারা জানেন না।
সভায় নিতাইগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শংকর সাহা অভিযোগ করেন,কোম্পানিগুলো নারায়ণগঞ্জে কতজন ডিলার নিয়োগ দিয়েছে তা তিনি জানেন না। সেই সাথে সিরিয়াল ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করেননা। চার মাস আগে আবেদন করে রাখলেও দেখা যাচ্ছে এক মাস আগে আবেদনকারী আগে তেল পেয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তিনি নারায়ণগঞ্জে সিটি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন। দাবি করেন, সিটি গ্রুপের একজন মাত্র ডিলার পুরো তেলের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। একাধিক ডিলার দেয়া হলে এই মনোপলি ভেঙে দেয়া সম্ভব। এছাড়া ডিলাররা তেল নিয়ে এসে গোপনে অন্য জেলায় বিক্রি করে দেয়। এর ফলে তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।অভিযোগের বিষয়ে সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জে একাধিক ডিলার নিয়োগের বিষয়ে আশ্বস্থ করেন। সেই সাথে স্থানীয় ডিলার অনিয়ম করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন প্রশাসকের কাছে।
এছাড়া মেঘনা গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের প্রতিনিধিরা জানায়, তাদের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জে কতজন তাদের ডিলার এবং জেলায় কি পরিমান সরবরাহ করা হয়েছে তা জানাতে পারেনি। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিনিধিরা জানায় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তেলের উৎপাদন কিছুটা কমে এসেছে। তবে বিদ্যমান উৎপাদনের পুরোটাই বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।
সভার শেষে জেলা প্রশাসক তেল সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন,নারায়ণগঞ্জে কোন কোম্পানির কতজন ডিলার রয়েছে এবং তাদের কি পরিমান সরবরাহ করা হয় প্রতি সপ্তাহে সেই তথ্য আমাদের পাঠাবেন। এর মাধ্যমে আমরা বাজার যাচাই করতে পারবো। বাজারে নিত্যপন্যের দাম বিগত রোজার মাসগুলোর চাইতে কম থাকলেও কেবল তেল নিয়ে কারসাজি চলছে। আমরা এটা বন্ধ করতে চাই। কোন কোম্পানি যদি একক ডিলার রাখেন, তাহলে বাজারে অস্থিরতা হওয়া স্বাভাবিক, একাধিক ডিলার নিয়োগের অনুরোধ করবো আমরা। নারায়ণগঞ্জের মানুষকে স্বস্থি দিতে এক সপ্তাহের মধ্যে তেলের বাজারে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, এনএসআই যুগ্ম পরিচালক দাদন মুন্সি,সোনারগাঁ ইউএনও ফারজানা রহমান, রূপগঞ্জ ইউএনও সাইফুল ইসলাম, জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বনিকসহ জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :