ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছারার পর থেকেই শুরু হয় মান্নান -মোশাররফ এর বেপরোয়া চাঁদাবাজি, দখলদারি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানা যায়।
এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি মামলা বানিজ্য, টাকার বিনিময়ে ইউনিয়ন পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত ও বিচার-সালিশে টাকার বিনিময়ে অন্যায় প্রতিষ্ঠা করছে তারা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় প্রায় ১০ টি মামলা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানিনগর ও ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার সংঘর্ষে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় এসব মামলা করা হয়েছে। সব মামলায় সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, সাধারন ব্যবসায়ি ও দিনমজুরসহ আরো প্রায় ৫ হাজার মানুষকে আসামী করা হয়েছে।
এসব মামলার নেপথ্য কারিগর সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন। নিরপরাধ মানুষদের মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করে তাদের ঘরবাড়ি দখল, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার পরিবহণ চাঁদাবাজ বিএনপি নেতা আতাউর রহমান, নিজামুদ্দিন, বাবুল ও শামীম। পিরোজপুর এলাকায় নীরিহ মানুষের জমি দখল করে নিচ্ছে মান্নানপন্থি বিএনপি নেতা মেনা, বারদী এলাকার আ. রহমানসহ বিশাল বাহিনী। এসব মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আবার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোনে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা কামানো ইঞ্জিয়ার মাসুমকে আসামি করার পর কয়েক কোটি টাকা নিয়ে বাদীকে দিয়ে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে টাকা নিয়ে আরও অনেককেই মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন মান্নান-মোশাররফ ও তার বাহিনী।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, আজহারুল ইসলাম মান্নান একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের দালালি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান তিনি। এরপরই বিশাল ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন।
গত ৭ আগস্ট মান্নানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাবেরচর এলাকায় সাবেক মহিলা মেম্বার মমতাজ বেগমের পরিবারের লোকজনকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে তার ভবনসহ জায়গা-জমি জবরদখল করে নিয়ে যান। এ ব্যপারে তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে অভিযোগ করেছেন এবং সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বর্তমানে সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান,মোশাররফ হোসেন ও তার বাহিনী মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তার বাহিনী প্রতাবেরচর গ্রামের মিন্টু, ঝাউচর গ্রামের আল আমিনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। মান্নানের ভয়ে প্রতাবেরচর, ঝাউচর ও আষাড়িয়ারচর গ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ইউনিয়নে শীলমান্দি ও পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনাঘাটে অবস্থিত ৩টি ইকোনমিক জোনসহ ৩৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন মান্নান-মোশাররপ ও তার বাহিনী।
সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউপির অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগ ঘরানার হওয়ায় তাদেরকে প্রথমে হত্যা মামলার আসামি করা হয়। পরে তাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে শূন্য স্থানে মান্নান ও মোশাররফ টাকার বিনিময়ে জনপ্রতিনিধিদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে সুপারিশ করেছেন। তাদের বাহিনী সোনারগাঁজুড়ে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও দখলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভোরে মান্নান-মোশাররফের সহযোগী সোনারগাঁয়ের চিহ্নিত চাঁদাবাজ আতাউরকে যৌথবাহিনী গ্রেফতার করে। পরে মান্নান আতাউরকে জামিনে বের করেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারী সোনারগাঁ পৌরসভার দিয়াপাড়া এলাকায় চিত্র নায়িকা দিতির বাড়িতে প্রায় শতাধিক লোক নিয়ে মোশারফ হোসেন বিচার শালিসির নামে লামিয়ার উপর হামলা চালিয়ে তাকে শারীরিকভাবে আহত করেন। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।
পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি মোশাররফ হোসেনতে কারন দর্শানো নোটিশ পাঠায়। ২৩ ফেব্রুয়ারি কারন দর্শানো নোটিশে স্বাক্ষর করা হলে ২৮ ফেব্রুয়ারি নোটিশ প্রকাশ্যে আসে।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন এর বন্ধু। তাই মোশাররফ হোসেন এর কারন দর্শানো নোটিশ ৫ দিন গোপনে রেখে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। মান্নান-মোশাররফ এর সামপ্রতিক কার্যক্রমে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :