মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের সরদার মাহামুদেরচর মরা আড়িয়াল খাঁ খেয়াঘাট দিয়ে নৌকাযোগে পারাপার হতে হতো ১০ গ্রামের মানুষের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের। খেয়া পারাপারে পোহাতে হতো অনেক ভোগান্তি। অবশেষে সেই ভোগান্তির অবসান হলো প্রবাসীদের উদ্যোগে।
উপজেলার নিলখীর মরা আড়িয়াল খাঁ নদে প্রবাসীদের অর্থায়ন ও স্থানীয়দের সার্বিক সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয়েছে কাঠের সেতু। সেতুটি পেয়ে খুশি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংযোগস্থল শিবচরের সরদার মাহমুদেরচর খেয়াঘাট। ঘাটটি দীর্ঘদিন ধরে খেয়া পারাপার হয়ে আশপাশের গ্রাম ও হাট-বাজারে যেতে হতো দুই পাড়ের মানুষদের। শহরে যাওয়ারও মাধ্যম এই খেয়াঘাট। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হতো অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার সময়। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। নির্মাণ করে দিয়েছেন কাঠের সেতু।
সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রবাসী সেতু’। এর দৈর্ঘ্য ৬০০ ফুট এবং প্রস্থ সাড়ে ৩ ফুট। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে সেতুটি তৈরি করতে দুই মাস সময় লেগেছে। ব্যয় হয়েছে দুই লাখ টাকা।
সেতুটি দেখতে আসা এলাকার বাসিন্দা জয়নাল হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি নিলখীতে। মাঝে মাঝেই এই খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার হতে হয়। পারাপারের সময় অনেক কষ্ট হয়। এখন এই সেতু হওয়াতে আমরা খুশি।’
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আব্দুর রব বলেন, এমন মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমরা খুব খুশি। সেতুটি অনেক আগেই দরকার ছিল। দেরিতে হলেও নতুন বছরে সেতুটি গ্রামবাসীকে উপহার দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।
ইতালি প্রবাসী কামাল আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, “আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল, এলাকার এই সেতুটি নির্মাণে ভূমিকা রাখব। কাঠের সেতুটি নির্মাণ করতে অবদান রাখায় খুব ভালো লাগছে।”
স্থানীয়রা বলেন, স্থানীয় সুজাত বেপারীর উদ্যোগে প্রবাসীদের অর্থায়নে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় দীর্ঘতম কাঠের সেতুটি যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। নিলখী ইউনিয়নের সরদার মাহামুদের চর গ্রামটি দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছিল নদীটি(মরানদী)। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার রয়েছে। এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় যেতে নদী পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। কাঠের এ সেতুটি নির্মাণ করার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হলো। সেতু উদ্বোধনের সময় এলাকার হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় সেতুটি।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে অবহেলিত এলাকার উন্নয়ন ঘটে। সেতুর মাধ্যমে দূর হয় নদী পারাপারের ভোগান্তি। সরকারিভাবে সেতু তৈরির আশায় যুগযুগ অপেক্ষার পর নিজেদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন এলাকাবাসী নিজেরাই। উদ্যোগ নিয়ে গড়ে তুলেছেন কাঠের একটি দীর্ঘ সেতু! আপাতত দুর্ভোগের অবসান হলেও এখানে স্থায়ীভাবে একটি সেতুর প্রত্যাশা গ্রামবাসীর।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :