বরিশালের উজিরপুরের শিকারপুর বন্দরের দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে বিএনপি`র ব্যানার টাঙিয়ে দোকান দখলের চেষ্টা দুই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় প্রয়াত এক মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিএনপির অফিসের ব্যানার টাঙিয়ে দখল করে নেওয়ার চেষ্টার বিষয় লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক মোঃ জালিস মাহমুদ মৃধা ও রুহুল কুদ্দুস হাওলাদারের বিরুদ্ধে।
দোকান মালিক মশিউর রহমান মামুন বলেন ইউনিয়ন বিএনপি`র ও অঙ্গসংগঠনের সাইনবোর্ড লাগানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদেরকে জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাইনি আমরা। উল্টো দখলদারদের অব্যাহত হুমকির মুখে দিশেহারা হয়ে পরেছি আমরা। তিনি আরো বলেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও বিএনপি করার অভিযোগ তুলে ওই ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের অফিসের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দখলে নিয়েছিলো উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতা কর্মিরা।
এ বিষয়ে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহাবুবুর রহমান মৃধার পূত্র ও বর্তমান দোকানের একাংশের মালিক উজিরপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহফুজুর রহমান মাসুম অভিযোগ করে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র গিয়াসউদ্দিন বেপারী নির্দেশে শ্রমিক লীগের শিকারপুর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় ইউপি সদস্য সুমন মৃধা জোর করে আওয়ামী লীগের অফিসের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে আমাকে আমার বৈধ সম্পত্তিতে দোকান ঘর তুলতে বাধা দেয়। হাইকোর্টে মামলা করে অনুকুলে রায় থাকার পরেও দোকান ঘর তুলতে দেয়নি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর তিনি পুনরায় তার সম্পত্তিতে দোকান ঘর নির্মান শুরু করেন। এসময় উল্লেখিত দুই যুবদল নেতার নেতৃত্বে তাদের ক্যাডার বাহিনী আমার কাছে ১ লাখ টাকা দাবী করলে ১০ হাজার টাকায় রফা দফা হয়। দোকান ঘরটি সম্পূর্ণ নির্মাণ হলে অপর যুবদল নেতা জালিছ মাহমুদ মৃধা দোকান ঘরটি সাময়িক সময়ের জন্য নির্ধারিত ভাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে মৌখিকভাবে খাদ্য বান্ধবের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন।
এ সুযোগে এই যুবদল নেতা ঘর মালিকের ভুয়া ঘর ভাড়া চুক্তি সম্পন্ন করে খাদ্য বন্ধনের লাইসেন্স নেন। বিষয়টি ঘর মালিক হিসেবে আমার দৃষ্টিগোচর হলে ওই যুবদল নেতাকে গোডাউন ঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি দোকান ঘর তালা বদ্ধ করে রাখেন। পরে স্থানীয় বিএনপি`র মধ্যস্থতায় ৩০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে পুনরায় ঘরে তালা খুলে দেন জালিছ মাহামুদ। কিছুদিন পরে ২ যুবদল নেতা একজোট হয়ে দোকান ঘরের জায়গা আওয়ামী লীগ দখল করে নিয়েছিল এই অজুহাত দেখিয়ে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ সাংবাদিক মাসুমের । চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এক পর্যায়ে উল্লেখিত যুবদল নেতারা কেন্দ্রীয় বিএনপি`র কার্যনির্বাহী সদস্য ও উপজেলা বিএনপি`র আহবায়ক এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর ছবি সম্বলিত শিকারপুর ইউনিয়ন বিএনপির স্থায়ী কার্যালযয়ের ব্যানার টাঙিয়ে দখলের চেষ্টা করেন। বিষয়টি ওই নেতাকে জানালে তিনি তার ব্যানার নামানোর নির্দেশ দিলে ব্যানারটির নামিয়ে ফেলেন। পরে বিএনপি`র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর ছবি সম্বলিত আরেকটি ব্যানার নিয়ে স্থায়ী দখলের চেষ্টা করেন ওই যুবদল নেতারা। শিকারপুর বাজারের প্রবীণ ঔষধ ব্যবসায়ী ডাক্তার গফুর উদ্দিন মঞ্জু বলেন, বিএনপি করার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ দখল করে নিয়েছিলো ওই ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব মোঃ হুমায়ুন খান বলেন- ওই দোকান ঘরে বিএনপি`র সাইনবোর্ড লাগানোর বিষয়ে বিএনপি অবগত নয়। অন্যের দোকান ঘরে ব্যানার লাগানোর কোন সিদ্ধান্ত বিএনপি দেয়নি। এর দায় ঐ যুবদল নেতাদের নিতে হবে। ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আব্দুর রব মিয়া জানান, ওই দোকানের প্রকৃত মালিক শিকারপুরের বিশিষ্ট সমাজসেবক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ডাক্তার আয়নাল হোসেন মৃধা এবং তার উত্তরসূরী সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান মাসুম। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে অন্যায় ভাবে তার দোকান ঘরের জমি দখল করে আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড টা নিয়ে রেখেছিল। আর বর্তমানেও আমরাও একই কাজ করতে পারি না। শিকারপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মশিউর মোল্লা জানান, যুবদল নেতা জালিছ ও কুদ্দুস শুধু সাংবাদিকের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান নয় শিকারপুরে এ আর হাওলাদারের ব্যক্তিগত জুটমিল এর রাস্তা দখল করে চাঁদাবাজি করছে। একই সাথে প্রায়তো ট্রলার চালক মাহবুব এর কাছ থেকে রীতিমতো চাঁদা আদায় করতেন যার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।
অভিযোগের বিষয় জালিছ মাহমুদ জানান, দোকান ঘরে জায়গা আওয়ামী লীগের দখলে ছিল এখন এটা আমাদের দখলে থাকবে। অপর যুবদল নেতা রুহুল কুদ্দুস জানান তখন সিনিয়র নেতাদের কথায় সাংবাদিকে দোকান ঘর তুলতে দিয়েছিলাম। বর্তমানে আমি আমার মত পাল্টিয়েছি সুতরা এটা আমাদের দখলেই রাখবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলী সুজা জানান, দোকান ঘরের জমি হাট বাজারের পেরি পেফি ভুক্ত এবং সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান গং এই জমির ডিসিআর বলে বৈধ মালিক। তিনি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :