কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া অপার সম্ভাবনাময় ঢেমসি চাষ এখন লালপুরে পদ্মানদীর চরাঞ্চলে। ৪০ বছর পর আবারো পরিক্ষামূলক ভাবে ঢেমসি চাষ শুরু হয়েছে। তুলনামূলক কম খরচ ও স্বল্প সময়ে ফলন দেওয়ায় ঢেমসি নতুন করে আশা জাগাচ্ছে। এরই মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় এই ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নব্বইয়ের দশক বা তারও পূর্বে এ অঞ্চলে ঢেমশির চাষ হতো। চলতি বছরে উপজেলার বিলমাড়িয়া পদ্মার চরে ৩০ শতক জমিতে ঢেমশি চাষ হচ্ছে। ইহার চাল এবং আটাতে রয়েছে অতিমাত্রায় প্রোটিন, মিনারেল এবং ফাইবার যাহা আমাদের উত্তম খাদ্য। আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস,পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, ভিটামিন (B1,B2,B3,B6,B12) ও সেলেনিয়াম সহ নানা পুষ্টিকর উপাদান।
গবেষণায় দেখা গেছে ঢেমসির চাল বা আটা খেলে আমাদের ডায়াবেটিক, ব্লাড প্রেসার, এ্যাজমা, হার্টের রোগের ঝুকি কমায় বা নিরাময় করে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি বহু আগে আমাদের দেশে এর চাষাবাদ হলেও কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যাবার কারন হল উচ্চ মূল্যের ফসলের আর্বিভাব, খাদ্যাভাসের পরিবর্তন, সর্বপরি কৃষকের নায্যমুল্য না পাওয়া। পৃথিবীর বহু উন্নত দেশ যেমন চীন, জাপান আমেরিকাসহ নানা দেশে ঢেমসির কদর অনেক বেশি, সেসব দেশে চাষাবাদ, প্রসেসিং সহ নানা পৃষ্ঠপোষকতা সরকার দিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীর চরে ধানের জমির পাশে ধনিয়ার ফুলের ন্যায় ফুল ফুটেছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে বাতাসে দোল খাচ্ছে ঢেমশির সাদা রঙের ফুল।
এসময় কথা হয় ঢেমশি চাষি মুনতাজ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩০ শতাংশ জমিতে ঢেমশি চাষ করেছি। এবার ভালো ফুল এসেছে, আশা করছি ফলনও ভালো হবে। এতে প্রায় ৩ হাজার খরচ হয়েছে। বাজারে এখন প্রতি মণ ঢেমশি ৬-৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমার ঢেমশি চাষ দেখে অনেকেই ঢেমশি চাষের জন্য আমার থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, এবছর পরিক্ষামূলক ভাবে ঢেশমি চাষ শুরু হয়েছে। কৃষক কম খরচে বেশি লাভবান হলে ভবিষ্যতে ঢেমশি চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে আমরাও বিলুপ্ত প্রায় ফসলটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। ঢেমশি চাল, আটা এবং মধু উৎপন্ন করে ঢেমশির বাজার সৃষ্টি করতে পারলে এটি আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :