কুড়িগ্রামের উলিপুরে দিনভর নানা নাটকীয়তার পর উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
এদিকে একই স্থান থেকে আওয়ামীলীগ দলীয় অপর এক চেয়ারম্যান পুলিশের নাকের ডগা থেকে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের এ ধরনের দ্বৈত ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে, সোমবার (১০ মার্চ) উলিপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়ে উপজেলা পরিষদে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভিজিএফ কর্মসূচী নিয়ে সভা আহবান করা হয়। ওই সভায় ৬ জন চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১১ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে তার কক্ষে সভা শুরু হয়। সভায় আওয়ামীলীগ ঘরানার ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতির খবর পেয়ে সেখানে থানা পুলিশ সাদা পোশাকে অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আওয়ামীলীগ দলীয় তবকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান স্থানীয় কয়েকজনকে ম্যানেজ করে তাদের মোটর সাইকেলে উঠে পুলিশের সামন দিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, সভা শেষে গ্রেপ্তার আতংকে ধামশ্রেনী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম উপজেলা পরিষদ ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থান করতে থাকেন। এসময় ভবনের ভিতরে ও বাহিরে সাদা পোশাকে থাকা থানা পুলিশ অবস্থান করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ধামশ্রেনী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ওই ভবন থেকে বের হননি। এসময় স্থানীয় ভাবে বিভিন্নজন উপজেলা পরিষদ ভবনে যাতায়াত করেন। তারা নানা কৌশলে চেয়ারম্যানকে বাঁচাতে তৎপরতা চালান। কিন্তু ততক্ষনে বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে উৎসুক জনতা ভিড় করতে থাকেন। এদিকে অফিসের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ চত্বর ত্যাগ করেন। অবশেষে বাধ্য হয়ে বিকাল ৫ টার পর ধামশ্রেনী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ভবন থেকে নেমে এসে সাদা পোশাকে থাকা পুলিশের কাছে ধরা দেন। এসময় সংবাদকর্মীরা চেয়ারম্যানকে আটক করার ছবি তুলতে গেলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেন বলে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন।
পরে তাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতাকে মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রফিকুল ইসলাম ধামশ্রেনী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মজিদ হাড়ির ভাতিজা বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তবকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, কিছুদিন পূর্বে আমাকে গ্রেপ্তার করে তিনটি মামলা দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে আমি সব গুলোতে জামিনে রয়েছি। আজ উপজেলা পরিষদে ভিজিএফ’এর সভায় গেলে সেখানে সাদা পোশাকে পুলিশ অবস্থান নেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে সেখান থেকে আমি সরে যাই।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান জানান, ধামশ্রেনী ইউপি চেয়ারম্যানকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতাকে মারধররের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় সেখান থেকে অপর চেয়ারম্যান পুলিশের সামন থেকে সটকে পরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ওই চেয়ারম্যান সেখান থেকে চলে যান। ইতিপূর্বে তবকপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা জানান, ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে ভিজিএফ কর্মসূচীর সভা সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে কোন চেয়ারম্যানকে আটক করা হয়নি বলে তিনি দাবী করেন। তবে তিনি বলেন, শুনেছি সন্ধ্যার আগে পরিষদের বাহির থেকে ধামশ্রেনী ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করেছে পুলিশ।
একুশে সংবাদ// এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :