পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরে যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন শহরবাসী। বুধবার (১২ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের হবিগঞ্জ রোড ভূমি অফিসের সামনে থেকে চৌমুহনা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। আবার সেন্ট্রাল রোড, পোস্ট অফিস রোড এবং মৌলভীবাজার রোডে গিয়ে একই চিত্র মিলছে। এসব চিত্র শুধু একদিনের নয়, নিত্যদিনের।
প্রতিদিন শহরের শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা, হবিগঞ্জ রোড, কলেজ রোড, মৌলভীবাজার রোড, স্টেশন রোড, সেন্ট্রাল রোড, নতুন বাজার, ভানুগাছ রোড রেল ক্রসিং, শাপলাবাগ সড়কে তীব্র যানজটে লেগে থাকে। যানজটের কারণে অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সের রোগী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষেরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানান, শহরের প্রতিটি মোড়ে নিত্যদিন তীব্র যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিত বাসস্ট্যান্ড, সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ব্যটারিচালিত অবৈধ রিক্সা ও টমটমের সীমাহীন দৌরাত্ম্য এবং ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা।
এছাড়া শহরের সেন্ট্রাল রোড, পোস্ট আফস রোড, পুরান বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূণ সড়র্কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য মালবাহী যানবাহন চলাচল এবং অবৈধ পার্কিং-এর ফলে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
যানজট প্রসঙ্গে মৌলভীবাজার রোডের বাসিন্দা মাখন সবর বলেন, গতকাল কালিঘাট রোড থেকে মৌলভীবাজার রোড পর্যন্ত আসতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লেগেছে। তীব্র যানজটের কারণে প্রায় সময় ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
শহরের হবিগঞ্জ রোডের ব্যবসায়ী সোলাইমান বলেন, শহরে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। ব্যস্ততম সড়কের মোড়গুলোয় যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। রিকশায় উঠলেই খারাপ লাগে। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠি।
শহরের কলেজ রোডের বাসিন্দা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন সড়কে টমটম, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার সীমাহীন দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক সময় দেখতাম শহরের অলি-গলিতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলাচল করতো ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা। কিন্তু এখন শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশকেও এ বিষয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। শহরে সড়কে চলাচলের জন্য কোন প্রকার অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন না হওয়ার কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে টমটম ও অটোরিকশার সংখ্যা। পরিস্থিতিটা এমন হয়েছে যে কেউ চাইলেই, যে কোনোসময় শহরের সড়কে টিমটম ও অটোরিকশা নামিয়ে চালাতে পারছে।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) জালাল উদ্দিন ভুইয়া জানান, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে একা যানজট নিরসন করা সম্ভব না। শহরটি যানজটমুক্ত রাখতে আমাদের ট্রাফিক বিভাগ সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও অবৈধ টমটম চালককে প্রতিদিনই মামলা দিচ্ছি এবং যাদের কাগজপত্র সঠিক নয় তাদের গাড়ি থানায় আটকে রাখছি। এজন্য সব শ্রেণিপেশার মানুষকে সচেতন হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।
এসব বিষয়ে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌর প্রশাসক ও ইউএনও স্যারের নির্দেশে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। আর যানজট নিরসন করা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, শহরের যানজট নিরসনে সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলে বাইপাস সড়ক নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছে। সড়কটির দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার, প্রস্থ ১০ দশমিক ৩ মিটার। রোড ডিভাইডার সহ ৬ দশমিক ২ কিলোমিটারের মধ্যে ১১ কালবার্ট, ৯টি ব্রিজ ও লেম্প পোস্ট থাকবে। শ্রীমঙ্গলের সকিনা সিএনজি পাম্পের উত্তর পাশ হয়ে মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল সড়কের কারিতাস কারিগরি কেন্দ্রের পাশে যুক্ত হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৫ কোটি টাকা।
এবিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইসলাম উদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরটি মৌলভীবাজার জেলার আগমন ও প্রস্থানের গেটওয়ে। শহরের মূল সড়কগুলো অত্যন্ত সরু এবং পাশাপাশি যানচলাচল বৃদ্ধির কারণে সড়কে নিত্যদিন যানজট লেগে থাকে। এখানে বছরজুড়ে অসংখ্য পর্যটকের সমাগম ঘটে। যানজট নিরসন ও পর্যটকদের যাতায়াত সহজীকরণের লক্ষ্যে শ্রীমঙ্গলে বাইপাস সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবটি গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন করেছেন। আশা করছি সংযোগ সড়ক (এন-২১৫) নির্মাণের পরবর্তী কার্যক্রম দ্রুতই শুরু হবে। বাইপাস সড়ক নির্মাণ হয়ে গেলে শহরে যানজট বলতে কিছু থাকবে না।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :