AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নলছিটির গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল হোগলাপাটি


Ekushey Sangbad
নলছিটি উপজেলা, ঝালকাঠি প্রতিনিধি
০২:০৮ পিএম, ১৬ মার্চ, ২০২৫
নলছিটির গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল হোগলাপাটি

নলছিটির গ্রামীণ জীবন ও শহরের জীবন এই দুই ধরনের জীবনে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তারপরও নলছিটি নিজ ঐতিহ্য বহন করেই এগিয়ে যাচ্ছে। নলছিটিতে মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে একসময় হোগলপাতার গভীর সম্পর্ক ছিল, যা আজ বিলুপ্তির পথে।

নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বুনানো হোগলা সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতেন চাষিরা। অন্যদিকে প্রয়োজনের তাগিদে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও ঝালকাঠির হোগলা পট্টিতে হোগলাপাতা কিনতে আসতেন ব্যবসায়ীরা। কালের বিবর্তনে প্লাস্টিকের আধিপত্যের কারণে হোগলাপাতার তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার যেমন কমে গেছে, তেমনি হোগলাপাতা নিজেই বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নলছিটির গ্রামীণ মানুষের ঐতিহ্যবাহী হোগলাশিল্প এখন আর আগের মতো কদর পাচ্ছে না। একসময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই হোগলাশিল্পের ছোঁয়া ছিল। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ হোগলাপাতার তৈরি পাটি (ওগলা) ব্যবহার করতেন। এটি মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও ব্যবহৃত হতো। বিশেষ করে গ্রামের সব শ্রেণির মানুষ খাওয়া, নামাজ ও ঘুমানোর কাজে হোগলাপাতার পাটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতেন। বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় তীব্র গরমে হোগলাপাতার হাতপাখা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী।

হোগলাপাতা নামক এই জলজ উদ্ভিদ উপকূলীয় অঞ্চলের এটেঁল মাটিতে জন্মায়। নদী, খাল ও ঝিলের কূলে হালকা জলাবদ্ধ স্থানে এটি বেশি দেখা যায়। এই পাতা লম্বায় প্রায় ৫ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত হয়। যখন পাতা ১ থেকে ২ ইঞ্চি চওড়া হয়ে সারি সারি গজিয়ে ওঠে, তখন সৃষ্টি হয় মনোমুগ্ধকর সবুজ পরিবেশ। বেড়ে ওঠার কিছুদিন পর এই জলজ উদ্ভিদে ফুল জন্মায়, আর এই ফুল থেকে এক প্রকার পাউডার তৈরি হয়, যা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবারের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

উপজেলার কামদেবপুর গ্রামের হোগলাপাটি নির্মাতা জয়নব বেগম বলেন, আগেকার দিনে সপ্তাহে দুজন নারী মিলে ২০-২৫টি হোগলা পাটি বুনতে পারতেন। বাজারে তুললে প্রতিটি পাটি ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হতো, আকারভেদে দাম নির্ধারিত হতো। তবে এখন আর হোগলাপাতা নেই, তাই বুননও হয় না।

উপজেলার জামুরা গ্রামের বাসিন্দা সেতারা বেগম জানান, আগে তিনি হোগলাপাতা দিয়ে পাটি বুনতেন, কিন্তু এখন হোগলাপাতা পাওয়া যায় না, তাই এ কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। আগে গ্রামের যেকোনো ছোট খালের পাশে অনায়াসে হোগলাপাতা পাওয়া যেত, কিন্তু এখন তা প্রায় দেখাই যায় না।

হোগলাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আগেকার দিনে গ্রামগঞ্জের বাজারে নির্দিষ্ট জায়গা থাকত শুধু হোগলাপাতা ও হোগলাপাটি (ওগলা) বিক্রির জন্য। কিন্তু এখন গ্রামগঞ্জের জমিতে হোগলাপাতা চোখেই পড়ে না।

এ বিষয়ে উপজেলার সমাজকর্মী বালী তাইফুর বলেন, হোগলাপাতা গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। গ্রামের নারীরা ঘরে বসেই কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেতেন। কিন্তু কৃষিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এবং গ্রামগঞ্জের খালগুলো মরে যাওয়ায় হোগলাপাতার বিলুপ্তি ঘটছে বলে মনে হচ্ছে।

কৃষিবিদ মাহবুবুর রহমান বলেন, অপরিকল্পিত বসতবাড়ি গড়ে ওঠার কারণে গ্রামেও শহরের মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। হোগলাপাতা মূলত রাস্তার পাশের নিচু জমিতে বেশি জন্মাত, কিন্তু এখন এসব জায়গায় সারি সারি পাকা ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। আগের দিনে হোগলাপাটিতে ধান শুকানো হতো, কিন্তু এখন পাকা ছাদযুক্ত বাড়ি হয়ে যাওয়ায় এর প্রয়োজনীয়তাও কমে গেছে। তবে সকলের উচিত প্রাচীন ঐতিহ্য ও পরিবেশ বান্ধব এই জলজ উদ্ভিদ হোগলপাতা সংরক্ষণে সচেতন হওয়া।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

 

Link copied!