৫ আগস্ট পরবর্তী সময়কালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজের অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধে নির্ভরযোগ্য এই বাহিনীর ভূমিকা বরাবরই প্রশংসিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায়, ফরিদপুরে স্থাপিত আর্মি ক্যাম্পেগুলো সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত একাধিক সফল অভিযান ফরিদপুর জেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এসব অভিযানের ফলে শুধুমাত্র অপরাধীদের দমনই নয়, বরং সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বস্তি, নিরাপত্তা ও আস্থার অনুভূতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত, জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং মাজার-ওরস সম্পর্কিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে কঠোর নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
গুরুত্বপূর্ণ অভিযান ও সাফল্য:
ফরিদপুরের আর্মি ক্যাম্পসমূহের পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে উল্লেখযোগ্যভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। সম্প্রতি সংঘটিত কিছু সফল অভিযান নিম্নরূপ—
বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংস পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিপদজনক মুহূর্তে পুলিশের আভিযানিক দলকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হয়, যা জরুরি মুহূর্তে সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও পুলিশ বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, যা মানবিক দায়িত্ব পালনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় সেনাবাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সাধারণ জনগণের জানমাল রক্ষা পায়। ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকদ্রব্য জব্দ ও দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। অবৈধ চাল মজুদ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালিত হয়, যার ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষত, পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। পরিকল্পিত হামলা ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও আটক করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে সংঘটিত হতে পারে এমন অপরাধ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ফরিদপুর সদর এলাকায় নিখোঁজ এক মেয়েকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থার সৃষ্টি করেছে। হিন্দু মন্দিরে মূর্তি ভাঙার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, যা এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় এবং দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আটরশি জাকের মঞ্জিলে লাখো মানুষের সমাগমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী বিশেষ টহল পরিচালনা করেছে, ফলে বিশাল জমায়েত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফরিদপুর সুগার মিল শ্রমিক নির্বাচনের সময় টহল পরিচালনা করে শ্রমিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের সমন্বয়ে ইটভাটায় অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে, ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সম্পদ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়েছে।
নিয়মিত টহল ও চেকপোস্ট: জননিরাপত্তায় নতুন মাত্রা:
ফরিদপুর আর্মি ক্যাম্পের নেতৃত্বে প্রতিদিন নিয়মিত টহল ও রাতে চেকপোস্ট পরিচালনার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। এই কার্যক্রমের ফলে—
অপরাধ প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, বিশেষ করে মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও চোরাচালানের হার হ্রাস পেয়েছে। ডাকাতি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে আসার ফলে সাধারণ জনগণ রাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারছে। ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে, যা স্থানীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপের ফলে ফরিদপুরে স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
*জনগণের আস্থা ও সেনাবাহিনীর প্রতিশ্রুতি*
সাম্প্রতিক অভিযানের ফলে ফরিদপুরের জনগণের মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকা ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দক্ষতা জনসাধারণের আস্থার জায়গায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আশ্বস্ত করেছে যে, ভবিষ্যতেও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের অভিযান ও টহল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সাধারণ জনগণকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে সম্মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুরক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা যায়।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :