অনুমোদনহীন অটোরিকশার কারণে ঝালকাঠির নলছিটিতে সড়ক দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে। অদক্ষ চালক, অনিয়ন্ত্রিত গতি ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। নলছিটির বিভিন্ন সড়কে দ্রুতগতিতে বাড়ছে অটোরিকশার সংখ্যা, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। বর্তমানে বেশিরভাগ দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে এসব অটোরিকশা চিহ্নিত হচ্ছে। একসময় হাতে গোনা কয়েকটি অটোরিকশা থাকলেও কয়েক বছরের ব্যবধানে চালকদের মতে, এ সংখ্যা তিন শতাধিক ছাড়িয়েছে। ফলে সড়কে তাদের আধিপত্য বেড়ে যাওয়ায় প্রাণহানি ও বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে।
নলছিটির বিভিন্ন রুটে প্রায় চারশতাধিক অটোরিকশা চলাচল করে, যা শহরের যাতায়াতব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
মোটরসাইকেল চালক ইমরান হাওলাদার বলেন, "সড়কে এখন অটোরিকশার আধিপত্য চলছে। যানবাহনের মধ্যে ৮০ শতাংশই অটোরিকশা। এসব চালকদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই, এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্সেরও প্রয়োজন হয় না। ফলে যে কেউ একটি অটোরিকশা কিনেই সড়কে নামছে। এমনও দেখা গেছে, কেউ কখনো কোনো যানবাহন চালায়নি, সেও অটোরিকশা কিনে চালাচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
থানা সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে সড়কে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার বেশিরভাগই অটোরিকশার কারণে কিংবা অটোরিকশা দুর্ঘটনার অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
২০ জানুয়ারি রাতে নলছিটি-দপদপিয়া সড়কের কান্ডপাশা এলাকায় দুটি অটোরিকশার প্রতিযোগিতার সময় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা সিয়াম হাওলাদার (১৮) নামে এক ছাত্রকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি তিমিরকাঠি ইসলামিয়া সালেহিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মো. মজিবর রহমান হাওলাদার মোটরসাইকেলযোগে নলছিটি সদর থেকে দপদপিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে খোজাখালি এলাকায় একটি অটোরিকশা তার মোটরসাইকেলের সামনে এসে পড়লে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের একটি দোকানের দেয়ালে ধাক্কা খান এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ৩ মার্চ বরিশাল-ঝালকাঠি সড়কের মগড় ইউনিয়নের শ্রীরামপুর এলাকায় একটি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাকে ধাক্কা দেয়। এতে চালক মো. শুভ হাওলাদারসহ তিনজন যাত্রী গুরুতর আহত হন এবং তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এছাড়াও আরও কয়েকটি দুর্ঘটনায় অটোরিকশার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অটোরিকশা চালক বলেন, "বর্তমানে যারা অটোরিকশা চালাচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত মাদক সেবন করে। ফলে দুর্ঘটনা কয়েকগুণ বেড়েছে। আগে হাতে গোনা কয়েকটি অটোরিকশা ছিল, তখন এত সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন সংখ্যা অনেক বেড়েছে, অথচ সড়কের প্রশস্ততা বাড়েনি। ফলে শহরের সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা দুটোই বাড়ছে। অধিকাংশ চালকের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। আমরা যারা পুরনো চালক, তারা অন্য যানবাহন চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে এই গাড়ি চালাই, কিন্তু একেবারে নতুন চালকদের জন্য দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি।"
সমাজকর্মী তাইফুর রহমান তূর্য বলেন, "সড়কে উঠলে প্রায় সব যানবাহনই অটোরিকশা মনে হয়। ফলে অনেকেই এটি ব্যবহারে বাধ্য হন। অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা বেপরোয়া গতিতে অটোরিকশা চালিয়ে রেস করে, যা পথচারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে এই প্রতিযোগিতার কারণে পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কর্তৃপক্ষের উচিত অটোরিকশা চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা এবং উপজেলায় কতগুলো অটোরিকশা আছে, চালকদের বায়োডাটাসহ তার একটি ডাটাবেজ তৈরি করা। এতে অনেক অপরাধও কমবে।"
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছালাম বলেন, "অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণেই মহাসড়কে অটোরিকশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন আঞ্চলিক সড়ক ও শহরের বিভিন্ন সড়কেও একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নির্দেশনা পেলে এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, নলছিটি উপজেলায় ঠিক কতগুলো অটোরিকশা চলাচল করছে, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তালিকা নেই।"
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "নলছিটিতে কতগুলো অটোরিকশা চলছে, তার সঠিক সংখ্যা আমাদের কাছে নেই। নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটিও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে সব অটোরিকশাই অবৈধভাবে চলছে।"
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :