বাজারে ক্রেতা না থাকায় চাষকৃত টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যারা টমেটো চাষ করেছেন তাদের দুর্দশার শেষ নাই। এ অবস্থায় চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার টমেটো চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বালিথুবা পূর্ব, বালিথুবা পশ্চিম, সুবিদপুর পূর্ব, সুবিদপুর পশ্চিমসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে শীতকালীন টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেতে টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও বাজারে সেগুলি বিক্রি না হওয়ায় পাকা টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চিন্তা আর হতাশা।
স্থানীয় চাষিরা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে টমেটো চাষে লাভবান হওয়ায় এটি ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে। এ বছর বাজার দর শুরুতে কিছুটা ভাল থাকলেও বর্তমানে দুই থেকে তিন টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ঋণগ্রস্ত অনেক চাষিদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর শীত মৌশুমে ১শ, ৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। এসব টমেটোর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের হাইটম, বিউটি, বিউটিফুল টু, বিপুল প্লাস, চক্র, পান পাতা, মেজর, বাহুবলিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ করা হয়েছে। বিগত সময়ে এসব জাতের টমেটো চাষ করে চাষিরা লাভবান হলেও এ বছর বাজার দর হঠাৎ করেই কমে গেছে। এতে চাষিরা তাদের আসল চালান উঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
উপজেলার ঘড়িহানা গ্রামের টমেটো চাষি বিশ্বজিৎ সূত্রধর, সোহেল, মনির হোসেন, বালিথুবা গ্রামের লোকমান, মোস্তফা সহ অনেকে জানান যে, বাজারে কোন টমেটো তুলে নিলে সেগুলি বিক্রির জন্য পাইকারি মিলছে না। সামান্য কিছু বিক্রি হলেও সেটি দুই থেকে তিন টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্ষেত থেকে তুলে আনার খরচও উঠছে না। এ অবস্থায় এটি চাষের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।
চাষিরা আরো জানান, অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও এবং দাদন ব্যবসায়িদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে টমেটো চাষে ব্যয় করেছেন এখন তাদের ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন সেব্যাপারে দিশেহারা। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির মাধ্যমে চাষিরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান সে দাবি জানিয়েছেন।
পাইকারী টমেটো ব্যবসায়ী মো. রিপন জানান, রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এলাকার টমেটো চালন হয়ে থাকে। বর্তমানে রাজধানীর বাজারে টমেটোর চাহিদা না থাকায় তারাও বিক্রি করতে পারছেন না ফলে পাইকাররা এখন আর এখানে টমেটো ক্রয়ের জন্য আসছেন না। এ কারণে টমেটো আগ্রহ করে কিনছেন না তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার জানান, গতবছর টমেটোর আবাদ হয়েছিল ৬৭ হেক্টর জমিতে। বন্যা পরবর্তীতে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে টমেটোসহ বিভিন্ন শাক-সবজির বীজ বিতরণ করায় টমেটোর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে যোগান বেশি হওয়ায় কৃষকেরা টমেটোর ভালো দাম পাচ্ছেন না। স্থানীয় পর্যায়ে টমেটো সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হতো। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :