চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া নানুপুর মাদরাসা বায়োগ্যাস প্রযুক্তিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশাল পরিসরে স্থাপিত এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্টটি এশিয়ার বৃহত্তম বলে দাবি করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও জামিয়া কর্তৃপক্ষ।
মাদরাসা সংলগ্ন পূর্ব পাশে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নির্মিত বায়োগ্যাস প্ল্যান্টটি দৈনিক নয় হাজার শিক্ষার্থীর রান্নার চাহিদা মেটাচ্ছে। এখান থেকে মাদরাসার দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজসহ যাবতীয় গ্যাস-নির্ভর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এই বিশাল প্ল্যান্টের মূল উৎস সাড়ে তিনশোরও বেশি গরু ও মহিষের গোবর এবং অন্যান্য জৈব বর্জ্য। এসব বর্জ্য থেকে উৎপন্ন মিথেন গ্যাস প্রক্রিয়াজাত করে রান্নার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
বায়োগ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি প্ল্যান্ট থেকে জৈবসার (Organic Fertilizer) তৈরি হচ্ছে, যা কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্ল্যান্টে ব্যবহৃত জৈব বর্জ্য পচন প্রক্রিয়া শেষে উচ্চ মানের সার হিসেবে পরিণত হয়, যা রাসায়নিক সার ব্যবহারের চেয়ে পরিবেশবান্ধব এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে কার্যকর।
এই প্ল্যান্ট পরিচালনার জন্য প্রতিদিন দশ থেকে পনেরো জন কর্মী নিয়োজিত আছেন, যারা পশুগুলোর দেখাশোনা, বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করেন। এতে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়েছে।
এত বড় পরিসরে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করতে প্রায় দুই কোটি টাকাও বেশী অর্থ ব্যয় হয়েছে জানিয়েছেন জামিয়া কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, মহিষ ও গরু ক্রয়, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন, ডাইজেস্টার ট্যাংক (গোবর গাঁজনের ট্যাংক), গ্যাস সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থা, গোবর সংগ্রহ ও মেশানোর ইউনিট, গ্যাস পাইপলাইন ও রান্নার সংযোগ, শ্রম ও স্থাপনা নির্মাণ খরচ জৈবসার প্রস্তুত ও সংরক্ষণ ইউনিট ইত্যাদি।
জামিয়ার পরিচালক আল্লামা সালাহউদ্দিন নানুপুরী বলেন, "জামিয়াকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্ল্যান্ট থেকে শুধু রান্নার প্রয়োজন মিটছে না, বরং উৎপাদিত জৈবসারের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রেও উন্নতি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।"
নানুপুর ওবাইদিয়া মাদরাসার এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি যেমন জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সহায়ক, তেমনি পরিবেশবান্ধব কৃষি ও টেকসই উন্নয়নের পথও প্রশস্ত করছে। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্ল্যান্ট ভবিষ্যতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :