মিলির বসয় ৩৩ বছর উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি তাকে দেখতে প্রতিদিন মানুষের ভিড় করছে মিলির বাড়ী। তার এখনো বাচ্চাদের মত তার খেলার সঙ্গি জুসের খালি বোতল কারন দামী কোন খেলনা কিনে দেওয়ার মত সক্ষমতা নেই তার পরিবারের। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা মিলি আক্তার। ১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। মিলি আক্তারের বয়স এখন ৩৩ বছর।
মিলি তার মা ফরিদা ইয়াসমিনের গর্ভে থাকা অবস্থায় বাবা নজরুল ইসলাম নিরুদ্দেশ হয়ে আর ফেরেননি। মিলিকে ২ বছর বয়সে নানা নানির কাছে রেখে সৌদি আরব চলে যান মা ফরিদা ইয়াসমিন। সেখানে কাটে তার একটানা ২৭ বছর। বাড়ি ফিরে দেখেন তার মিলির বয়স ঠিক বেডেছে কিন্তু শরীরের উচ্চতা বাড়েনি। হরমোনজনিত কারনে টানা ৩৩ বছরে মিলি শরীরের উচ্চতা হয়েছে মাত্র (২৮ ইঞ্চি) ২ ফুট ।
বর্তমানে এ পরিবারের ক্ষুদ্র মিলির প্রতিদিনের জীবনযাপন রাত ১১ টায় সবার সাথে ঘুমাতে যায় সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই দাঁত বেরাস, গোসল সেরে নেয়। তবে, বেশীরভাগ সময়ই ছোট ভাইয়ের কাছেই থাকেন সে। বৃদ্ধ মাতা মোসাঃ ফরিদা ইয়াসমিন অসুস্থ তাও সে বুঝে ওঠে সময় অসময় বিরক্ত করেনা। মাঝের মধ্যে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপচ্ছন্দের কিছু হলে চট করে রেগে যান। মোবাইলে গেম খেলা, গান শোনা, নাচ করা তার ইচ্ছ। মিলি মাছ, মাংস, পিঠা, ফলের মধ্যে আপেল ও কমলা খেতে বেশ পছন্দ করে।
মায়ের কাছে বিভিন্ন সময়ে তার দাবি আমদের এরকম ছোট ঘর কেনো? সিঁড়ি দিয়ে দোতলা ঘর হবে কবে, সে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নামা করবে। গবাদী পশু গরুর লালন পালন করার ইচ্ছা তার। সংবাদকর্মীদের কাছে পেয়ে ক্ষুদে মানুষ মিলি শুধু হাসে আর বলে একটি গরু একটি ছাগল আর ঘর প্রয়োজন তার।
মিলির আক্তারের মা মোসাঃ ফরিদা ইয়াসমিন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ৫ মাস বয়সে মিলিকে গর্ভে রেখে এবং সাড়ে ৩ বছর বড় মেয়ে পলি আক্তারকে ওর বাবা ফেলে রেখে চলে যায়। অভাবের সংসারে অনেক যুদ্ধ করে বড় মেয়েকে কোনমতে লেখাপড়া করিয়ে বিবাহ দিয়েছি। মিলি জন্ম থেকেই ওকে কোন চিকিৎসা ও ভাল খাবারও দিতে পারিনী। নিজে পরে আবার বিবাহ করি এ দুই মেয়েকে নিয়ে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটা উপজেলার বর্তমান স্বামীর বাড়ির। সেখানেও বসবাস করতে পারেনি। স্বামীকে নিয়ে নিজের জন্মস্থানে ফিরে এসেছি। এ ঘরে একটি মাত্র কলেজ পড়–য়া ছেলের অর্থের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পড়ালেখা। ৪২ শতক জমি ক্রয় করে বসতভিটাটুকুই এখন সম্বল।
তিনি বলেন, সরকারী সাহায্য বলতে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধি কার্ডই এক মাত্র ভরসা। মেয়ের গরু আর ছাগল পোশার শখ এখনো মেটাতে পারিনি। প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের বসবাস তাই কখন কার কাছে গেলে কি সাহায্য পাওয়া যায় তাও জানিনা। বেঁচে থাকতে মেয়ের জন্য তিনবেলা দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে যেতে পারলেই শান্তি পেতাম।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :