AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মৌলভীবাজারে প্রাচীনতম ঈদগাহ হজরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রহ.) পৌর ঈদগাহ


মৌলভীবাজারে প্রাচীনতম ঈদগাহ হজরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রহ.) পৌর ঈদগাহ

ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিক থেকে জেলার সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীনতম ঈদগাহ হজরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রহ) পৌর ঈদগাহ। দীর্ঘ ৯৩ বছর ধরে ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে আছে জেলা শহরের পৌর ঈদগাহটি।

জানা যায়, ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন আসাম পূর্ব বাংলার মন্ত্রী খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদ (সিআইই) ও তার পরিবারের সদস্যরা ৪৫ শতক জমির ওপর ঈদগাহটি নির্মাণ করেন। ১৯৩৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ মাঠে ঈদের জামাত শুরু হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ও মৌলভীবাজার পৌরসভার উদ্যোগে ঈদগাহটি সম্প্রসারণ, সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায, ১৫৮ শতক জমিতে নির্মিত ঈদগাহ মাঠের সীমানা প্রাচীরের চারদিকে রয়েছে ছোটবড় ৮টি গেট। দেশি-বিদেশী মূল্যবান মার্বেল পাথরে নির্মাণ করা হয়েছে তিন গম্বুজের মিম্বর। মিম্বরটি হালকা ছাই রঙের মার্বেল পাথরে মোড়ানো, দেখতে বেশ দৃষ্টিনন্দন। এর মাঝ বরাবর দুদিকে কালো রঙের দুটি বাঁকানো পায়া। তার ওপরে আরবিতে খোদাই করা লেখা। মিম্বর ছাড়াও রয়েছে মার্বেল পাথরে মোড়ানো বিশাল আকৃতির দুটি দৃষ্টিনন্দন ফটক। একই সাথে উঁচু টাওয়ারে মতো আরও বেশ কয়েটি গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে; সেগুলোও দেখতে অসাধারণ। মাঠ সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়ণের ফলে ঈদগাহটি এখন আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠেছে।

এ ঈদগাহে মৌলভীবাজার শহর এবং এর আশপাশ এমনকি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহ নিয়ে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ পড়তে আসেন। বর্তমানে ঈদগাহ মাঠের ভেতরেই একসঙ্গে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়ত পারছেন। এছাড়া আশপাশ মিলে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাত আদায় করার সুযোগ রয়েছে বলে জানায় পৌর কর্তৃপক্ষ।

মৌলভীবাজার পৌরসভার প্রশাসক ও মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বুলবুল আহমদ জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হজরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রহ) পৌর ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রধান তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল সাড়ে ৬ টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৭ টায় ও তৃতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮ টায় অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন জেলা জামে মসজিদের খতিব ও মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম। ছানি ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন বায়তুল মোনাওয়ার জামে মসজিদের (স্ট্যান্ড মসজিদ) খতিব ও জামেয়া দ্বীনিয়া মৌলভীবাজারের প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা সৈয়দ মাজদুদ আহমদ রাফিদ। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল আমান জামে মসজিদের খতিব ও মৌলভীবাজার জামেয়া ইসলামিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হক। ছানি ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন শান্তিবাগ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা  মোজাম্মিল হক মাহিরী।তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবন সুলতানপুর জামে মসজিদের খতিব ও আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম টাইটেল মাদরাসার  মুহতামিম মুফতি মাওলানা শামছুজ্জোহা। সানী ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন কাজিরগাঁও জামে মসজিদ খতিব মাওলানা ক্বারী মোঃ মুহাররম আলী।

মৌলভীবাজার শহরের জ্যেষ্ঠ নাগরিক দরগাহ এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুল মোতালিব বলেন, মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে বড় এবং পুরোনো ঈদগাহ হলো মৌলভীবাজার টাউন ঈদগাহ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঈদগাহ এটি। দুই তিন ঈদের জামাতসহ বড় বড় জানাযার নামাজ এখানে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি ঈদের জামাতে ঈদগাহ মাঠ, আশপাশ সড়কসহ সব মিলিয়ে একসাথে লক্ষাধিক মুসল্লি নামায আদায় করতে পারেন।

মৌলভীবাজার শহরের আরেক বাসিন্দা সৈয়দ খলীলউল্লাহ ছালিক জানান, দৃষ্টিনন্দন ঈদগাহটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থীরা আসেন। বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দুয়েকদিন আগে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। কারণ এসময় বর্ণিল সাজে ইদগাহ মাঠ ও আশপাশ এলাকা সুসজ্জিত করা হয়।

স্থানীয় আলেম মাওলানা আশরাফ উদ্দিন জানান, ১৯৩৩ সাল থেকে মৌলভীবাজার টাউন ঈদগাহ মাঠে প্রথম ঈদের জামাত শুরু হয়। ঈদের প্রথম জামাতের ইমাম ছিলেন বালিকান্দির বাসিন্দা মৌলভী সৈয়দ নজিবুদ্দিন আহমদ। ঈদগাহে শহরের বাসিন্দা ও আশেপাশে এলাকা- খলাপাড়া, সুলতানপুর, কাজিরগাঁও, দর্জিরমহল, গোবিন্দশ্রী, ধরকাপন, বালিকান্দি,বড়হাট, হিলালপুর,বর্ষিজোড়া, জগন্নাথপুর ইত্যাদি এলাকার লোকজন ঈদের নামাজে শরীক হতেন।

এরপর ইমামতি করেন মৌলভীবাজার জেলার কৃতি সন্তান দারুল উলুম দেওবন্দের ফারেগ মাওলানা সৈয়দ নাজির উদ্দিন রহ.। তিনি বেশ কয়েক বছর ঈদের নামাজে ইমামতি করেন। পর্যায়ক্রমে কয়েকজন বিশিষ্ট আলেম এখানে ঈদের জামাতের ইমামতি করেন। তন্মধ্যে মাওলানা আব্দুল বারী সিদ্দিকী (রহ.), যিনি দারুল উলুম দেওবন্দ এবং ভারতের ফতেহপুর মাদরাসায় পড়ালেখা করেন। তিনি মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। মাওলানা শফিকুল হক খান রহ. তিনিও দারুল উলুম দেওবন্দের ফারিগ ছিলেন এবং মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। মাওলানা আমিনুল বাহার জামালী রহ. যিনি টাউন দেওয়ানী মসজিদের ইমাম ছিলেন এবং টাউন সিনিয়র মাদরাসার উস্তাদ ছিলেন। মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সিদ্দিকী রহ. তিনি মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। এভাবেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এখনও কওমি-আলিয়া উভয় ঘরানার আলেমরা এই ঈদগাহ মাঠে ঈদের তিনটি জামাতে ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!