স্বজনদের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে ঢাকাসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে বাড়ি ফিরছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। এতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। তবে, মহাসড়কে এখন পর্যন্ত যানজট দেখা যায়নি। ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তির করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে সিরাজগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ হাইওয়ে পুলিশ।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকাল থেকে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়, মুলিবাড়ি চেকপোস্ট, নলকা, হাটিকুমরুল গোলচত্ত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ির চাপ লক্ষ্য করা গেছে। তবে বেলা ১২ টা পর্যন্ত মহাসড়কগুলোতে কোনো যানজট নেই। স্বাভাবিক গতিতে চলছে যানবাহন।
এদিকে, উত্তরের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ এড়াতে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে ১১টি উড়াল সেতুর মধ্যে ৯টি এবং হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের সার্ভিস সড়ক খুলছে। এছাড়া ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেন হওয়ায় এর সুফল পেয়েছেন ঘরমুখো মানুষ। সড়কে চলাচলকারীরা চলছে, বিগত সময়ের চেয়ে এবারে উত্তরাঞ্চলে ঈদযাত্রা হয়েছে অনেকটা স্বস্তি দায়ক।
জানা যায়, জেলার ৫৫ কিলোমিটার ন্যাশনাল হাইওয়েসহ ১০৫ কিলোমিটার মহাসড়কের নিরাপত্তায় প্রায় ১ হাজার ৭ শতাদিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ৮ জেলা ছাড়াও খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার গাড়ি চলাচল করে। দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের ঢাকায় যাতায়াতের পথ যমুনা সেতু পশ্চিম সড়ক। প্রতি ঈদেই ঘরমুখো মানুষের চাপে এ মহাসড়কে তিন থেকে চারগুণ যানবাহন চলাচল করে। অতিরিক্ত গাড়ির চাপে যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় উত্তরের যাত্রীদের। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা, ডাকাতি, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টিসহ নানা ধরণের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তাই এ বছর ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাড়তি পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কসহ জেলার চারটি মহাসড়কে এক হাজার ৭০ জন পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে জেলা পুলিশ ৬৪৮, হাইওয়ে পুলিশ ৩২২ ও এপিবিএন ১০০ জন রয়েছে। এর পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখাও মহাসড়কের সার্বিক নিরাপত্তায় রয়েছে। সেই সঙ্গে মহাসড়কে ৪৫ টি মোবাইল টিম ও ৫৬ টি পিকেট টিম। যান চলাচল মনিটর করতে উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ সলঙ্গা হাটিকুমরুল গোলচত্বর ও ঝাঐল ওভারব্রিজে দুটি ড্রোন ক্যামেরা প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন অপসারণে বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে রেকার।
সাউথ এশিয়ান সাব রিজিওনাল কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এবারের ঈদযাত্রা সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত ও স্বস্তিদায়ক হবে। যমুনা সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত চার লেন রয়েছে। শুধু ভুঁইয়াগাতীর একটি পয়েন্টে তিন লেন রয়েছে। তবে গাড়ির চাপ বাড়লেও যানজটের আশংঙ্কা নেই।
সাসেক-২ এর প্রকল্প পরিচালক ড. ওয়ালিউর রহমান বলেছেন, সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে কোনো ভোগান্তির শঙ্কা নেই। দুর্ভোগ এড়াতে যমুনা সেতু পশ্চিম উত্তরের ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে নির্মিত ১১টি উড়াল সেতুর মধ্যে ৯টি ও হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের সার্ভিস সড়ক খুলে দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. জিয়াউর রহমান গণমাধ্যম কে বলেন, জেলার ৫৫ কিলোমিটার ন্যাশনাল হাইওয়ে রয়েছে। এছাড়া জেলার সবগুলো মহাসড়কেই ঈদে বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচল করে। ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশের ৬৪৮ জন নিয়োজিত রয়েছে। তারা তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। পোশাকধারী পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ব্ল্যাক স্পটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব স্থানে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
হাইওয়ে পুলিশ সুপার (বগুড়া রিজিওন) শহিদ উল্লাহ বলেন, সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশের ৩২২ জন ও এপিবিএনের ১০০ জন নিয়োজিত রয়েছে। এছারাও বিভিন্ন উড়াল সড়ক ও আন্ডারপাস খুলে দেওয়ায় মহাসড়কের অবস্থা অনেকটা ভালো রয়েছে। এবারের উত্তরাঞ্চলের ঈদযাত্রা স্বাভাবিক ও সুন্দর হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি।
একুশে সংবাদ// এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :