সরকারি খালের জায়গা অবৈধভাবে ভরাট করে দখলের মহাউৎসবে মেতেছেন সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ একটি প্রভাবশালী মহল।শুধু তাই নয়, দখলকৃত জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন তারা। এতে ভরা বর্ষা মৌসুমেও কৃষি জমিতে পানিশূন্যতার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার দুশ্চিন্তায় কৃষকরা।
পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ সরকারি এসব খাল দখলের ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা রয়েছে দাবি করছে স্থানীয় সচেতন মহল। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছেন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
কৃষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার ৩৩নং ধামূসা মৌজার ১ খতিয়ানে বিআরএস ৭২১নং দাগে খাল সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত রয়েছে। এই খালের প্রবাহিত পানি দিয়েই কয়েক শত একর জমিতে ফসল ফলাতো কৃষকেরা। পর্যায়ক্রমে সেই সরকারি খালের জায়গাটি ভরাট করে দখল করেন স্থানীয় প্রভাবশালী সৈয়দ শাহ-আলম ও ডাসার উপজেলার ডাসার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ বেলায়েত হোসেন। খালটি পুরোপুরি বন্ধ করে একাধিক সেমি পাকা দোকানসহ নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন।
এর আগে এ নিয়ে নিউজ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। সরেজমিন গিয়ে নকশা দিয়ে পরিমাপ করেন সরকারি সার্ভেয়ার মো. দেলোয়ার হোসেন। এসময় দেখতে পান সরকারি খাল ভরাট এবং দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা ভবন। পরে দখলদার সৈয়দ শাহ-আলমের কাজে বাধা দেন তিনি। এসময় বাজার কমিটি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সম্মুখে ওই জায়গার ওপর কাজ করতে নিষেধ করেন ওই সার্ভেয়ার। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতে পুনরায় শুরু করেন ভবন নির্মাণের কাজ। কখনো রাতে আবার কখনো সরকারি বন্ধের দিনে কাজ চলমান রেখেছেন তিনি।
সরজমিনে দেখা গেছে, সরকারি খালের ওপর নির্মিত একটি বহুতল ভবনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বুধবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবসে সরকারি ছুটি থাকার সুযোগে তড়িঘড়ি করে ভোর রাত থেকে এ ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ করেন দখলদার সৈয়দ শাহ-আলম।
ডাসার উপজেলার কাঁঠালা বাজার কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল আলম লাহিদ বলেন, এ খালটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন হত। কৃষকরা এই খালের পানি দিয়ে ফসল ফলাতো। আজ খালটি পুরো দখল হয়ে গেছে। সরকারি জায়গা দখল মুক্ত করে যদি সরকারি খাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাহলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, দেখলাম কিছুদিন আগে মাপ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করল সরকারি সার্ভেয়ার ও তহশিলদার। সৈয়দ শাহ-আলমকে বলল, আপনি খাল ভরাট করছেন, খালের জায়গায় পাকা ভবন পড়ছে। কাজ বন্ধ রাখুন। এহন দেহি আবার বিল্ডিং করছে। কই এহনতো সরকারি লোক দেহিনা। টাকার কাছে সবাই বিক্রি হলো।
দখলদার সৈয়দ শাহ-আলম বলেন, আমার জায়গায় ভবন নির্মাণ করছি। যদি সরকারি জায়গায় কিছু পড়ে, তাহলে ওইটুকু ভেঙে ফেলব।
এ ব্যাপারে আরেক দখলদার ডাসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ বেলায়েত হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ডাসার উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. সামচুল আলম বলেন, ইউএনও স্যার বিষয়টি দেখার জন্য বলেন। আমি গিয়েও তাকে কোন প্রকার কাজ করতে নিষেধ করি এবং তার কাগজ নিয়ে ইউএনও স্যারের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করি। নিষেধ অমান্য করে অবৈধভাবে আবারও কাজ করছে এটা আমার জানা নেই।
ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ উল আরেফিন বলেন, পূর্বের সার্ভেয়ার যদি কোনো রিপোর্ট দাখিল করতো, তাহলে সেই রিপোর্টের আলোকে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তারপরও সমস্যা নেই। আমরা আবার সার্ভেয়ার দিয়ে জায়গাটি পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করব। যদি সরকারি জায়গায় ভবন হয়। তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
একুশে সংবাদ// এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :