সৎ মায়ের নির্যাতন কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা সাত বছরের শিশু রাফিয়ার নির্বাক ও মলিন মুখের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বোঝা যায়। মা হারা এই অসহায় শিশুটির ওপর দিনের পর দিন চলেছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এতটুকু বয়সেই তার শরীরে জমে উঠেছে মানুষরূপী এক ‘মা’-এর প্রতিহিংসার ভয়ঙ্কর চিহ্ন। বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার বাবা—নিজের কলিজার টুকরোর এই অবস্থা দেখে।
ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জসিমের সাত বছর বয়সী মেয়ে রাফিয়া সৎ মা সালমার অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
জসিম জানান, "ছয় বছর আগে আমার প্রথম স্ত্রী রাহিমা বেগম মারা যান, তখন রাফিয়ার বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। স্ত্রীর মৃত্যুর দুই বছর পর আমি দ্বিতীয় বিয়ে করি। দ্বিতীয় সংসারে আমার এক বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, “সালমা প্রায়ই আমার মেয়েকে মারধর করত। জিজ্ঞেস করলে বলত—‘পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে’, কিংবা ‘কাঁটার সঙ্গে লেগে দাগ হয়েছে’। আমি প্রায় সময় কাজের কারণে বাইরে থাকি, তখনই সে আমার মেয়েকে নির্যাতন করত।”
গত ৮ এপ্রিল জসিম বাড়ি ফিরে দেখতে পান, মেয়ের মুখে কাটা দাগ, হাতে ও পায়ে পোড়ার চিহ্ন। পরে জানতে পারেন, সালমা তাকে গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দিয়েছে। ঘটনাটি শুনেই তিনি স্ত্রীকে ঘরে আটকে রেখে রাফিয়াকে নিয়ে দ্রুত ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ছুটে যান। বর্তমানে রাফিয়া সেখানে চিকিৎসাধীন।
জসিম তার মেয়ের উপর এ বর্বর নির্যাতনের জন্য স্ত্রী সালমার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর জসিম দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু সৎ মা সালমা শুরু থেকেই রাফিয়াকে সহ্য করতে পারত না। প্রায়ই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। একবার মাথায় মারধর করে গুরুতর আঘাত করেছিল, তখনও সালমা মিথ্যা বলেছিল—‘পড়ে গিয়ে মাথা ফেটেছে’।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন—সৎ মা, সেও তো মা! একজন মা কীভাবে অবুঝ শিশুর ওপর এমন নির্মম আচরণ করতে পারে? যার হৃদয়ে এতটা নিষ্ঠুরতা—সে তো মা নয়, মা জাতির কলঙ্ক! এমনটাই বলছেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :