চীনা নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ের প্রলোভনে ফেলে অভিনব কায়দায় বাংলাদেশি তরুণীদের চীনে পাচার করছে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৭-৮ বছরে প্রায় ৯ হাজার মেয়ে এভাবে পাচারের শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের অল্পশিক্ষিত, সহজ-সরল ও দরিদ্র পরিবার থেকে আসা মেয়েরা, বিশেষ করে পার্বত্য এলাকার তরুণীরা।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগে জানা যায়, চাইনিজ কোম্পানিতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে তাদের ঢাকায় ডেকে আনা হয়। এরপর বলা হয়, ভিসা পেতে হলে চীনা নাগরিককে বিয়ে করতে হবে। বিয়েতে রাজি হলেই পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং বিদেশ যাত্রার আয়োজন করে দালাল চক্র।
চীনে পৌঁছানোর পর, তাদের সরাসরি চীনা পুরুষদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং জোর করে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। তাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার করা হয়। কেউ কেউ জানান, কিছুদিন পর তারা জানতে পারেন—তাদেরকে প্রতি মেয়ের জন্য প্রায় ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ৪৬ নম্বর বাড়ি—এই আটতলা ভবনটি পুরোপুরি ভাড়া নিয়ে চাইনিজ নাগরিকরা মানব পাচারের অপারেশন চালাচ্ছে। এখান থেকেই বাংলাদেশি মেয়েদের সংগ্রহ, বিয়ে, ডকুমেন্ট প্রসেসিং ও পাচার করা হয়।
চক্রটির অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে শাকিব শেখ, সুমন, রবিউল, সুফিয়া ও শান্তা-র নাম উঠে এসেছে। জানা গেছে, এদের বিরুদ্ধে মানব পাচার, মাদক ও ধর্ষণের একাধিক মামলা রয়েছে। তবুও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “গ্রামের সহজ-সরল মেয়েদের সরলতা ও আর্থ-সামাজিক অসচ্ছলতাকে পুঁজি করেই এই চক্র তাদের জালে ফাঁসায়।” তারা দু’দেশের (বাংলাদেশ ও চীন) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ, সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নজরদারি জোরদার করার আহ্বান জানান।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো দালালদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও, পাচার হওয়া মেয়েদের চীন থেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :