বৈশাখ মানেই নতুনের আহ্বান, নতুন স্বপ্ন, নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন। প্রকৃতির রঙে রাঙানো এই দিনটি বাঙালির হৃদয়ে এক অনন্য আবেগের নাম। ষড়ঋতুর খেলাঘরে ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাতের মধ্য দিয়ে বৈশাখ আসে নবজাগরণের বার্তা নিয়ে। আর সেই আবেগকে সঙ্গী করে পহেলা বৈশাখে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়েছে বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় উৎসব।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে রাজাপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন ও লোকজ উপকরণে সাজানো এই শোভাযাত্রাটি উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে উপজেলা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিতা আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য পরিবেশনা ও লোকজ মেলার মধ্য দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠানটি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ।
এদিকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকেও নেয়া হয় ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর বের করা হয় শোভাযাত্রা। পরে বাঘড়ি চন্দ্রবাণ শিশু নিকেতনের খেলার মাঠে নারীদের অংশগ্রহণে হাড়ি ভাঙা খেলা, উপজেলা পুকুরে হাস ধরা প্রতিযোগিতা এবং মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ঐতিহ্যবাহী তৈলাক্ত কলাগাছ বাওয়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
একই দিনে মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিপ্লবী ছাত্রজনতার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় ঘুড়ি উৎসব, রশি টানাটানি ও হাস ধরা প্রতিযোগিতা। এতে অংশগ্রহণকারী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে দেখা যায় ব্যাপক উৎসাহ।
অন্যদিকে, উপজেলার সাউদপুর এলাকার পূর্ব রাজাপুর এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা ও ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা। এছাড়া সত্যনগর ও সাংগর এলাকাবাসীর ব্যবস্থাপনায় বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় আরও দুটি ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা, যা স্থানীয়দের মাঝে বাড়িয়ে তোলে উৎসবের আমেজ।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন থেকে বাদ যায়নি উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। রাজাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, রাজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজাপুর সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনব্যাপী চলে নানাবিধ আয়োজন।
পহেলা বৈশাখ কেবল একটি দিন নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে এই দিনটিকে রাঙিয়ে তোলে নতুন স্বপ্ন, নতুন সম্ভাবনা আর শুভ কামনায়। তাই তো পেছনে ফেলে জীবনের গ্লানি ও ব্যর্থতা, এই দিনে মানুষ খোঁজে নতুন জীবনের আশ্বাস। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন ছিল সেই ঐক্যবদ্ধ আনন্দ ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আপনার মতামত লিখুন :