চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম এবং ধানে তেমন কোনো রোগবালাই না লাগায় ফলন অত্যন্ত ভালো হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে ধান কাটার কাজ। কৃষকের ঘরে ঘরে ফিরবে নবান্ন উৎসবের আমেজ।
উপজেলার উথলী, আন্দুলবাড়িয়া, মনোহরপুর, রায়পুর, হাসাদাহ, বাঁকা ও সীমান্ত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ধান পেকে সোনালি রঙ ধারণ করেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ—এ দৃশ্য দেখে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি।
দু-এক দিনের মধ্যেই শুরু হবে ধান কাটা। এরপর ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে ধানের আঁটি বেঁধে বাড়িতে আনা হবে। জীবননগরের কৃষকেরা পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও বছরে দুবার ধান চাষ করে থাকেন। ধানের পাশাপাশি এর বিচালি উৎকৃষ্ট মানের গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রাপ্ত বিচালির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা।
উপজেলার এক ধান চাষি শাহাবুদ্দিন বলেন,
“আমি এবার দুই বিঘা জমিতে খাটো বাবু জাতের ধান চাষ করেছি। ধান খুব ভালো হয়েছে। আগামী পরশু ধান কাটা শুরু করবো। প্রতি বিঘায় প্রায় ৩০ মণ করে ধান হবে আশা করছি। নিজের খোরাকের জন্য কিছু রেখে বাকি বিক্রি করবো। বিচালিও গরুর সারা বছরের খোরাক হয়ে যাবে।”
অন্য এক কৃষক আব্দুর রহমান জানান, “আমি দেড় বিঘা জমিতে রড মিনি জাতের ধান চাষ করেছি। ফলন এবার খুব ভালো হচ্ছে। মাঠের ধান দেখে খুব আশাবাদী। তবে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় আছি। ধান ঘরে না উঠা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না। ধান বিক্রি করে মহাজনের হালখাতা ও বর্গা জমির টাকা শোধ করবো।”
একই গ্রামের কৃষক মন্টু মিয়া বলেন, “ধান চাষ এখন অনেক ব্যয়বহুল। তবে এবার ফলন দেখে মনে হচ্ছে, ধান লাগানো, সেচ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভ থাকবে।”
জীবননগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, “এ বছর জীবননগরে ৬,১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৬,১৬২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে। বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানে ফলন অত্যন্ত ভালো হচ্ছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব তেমন ছিল না এবং ধানে রোগবালাইও তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাসের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। এখন ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেলে দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :