চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী `জব্বারের বলী খেলা`র ১১৬তম আসর আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শত বছরেরও বেশি পুরনো এই কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামের লোকজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন।
বিকেল ৪টায় বলীদের লড়াই শুরু হয়। এবারের আসরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৮৪ জন বলী অংশ নেন। দর্শকে ঠাসা ময়দানে একের পর এক রুদ্ধশ্বাস লড়াই উপভোগ করেন হাজারো দর্শক।
চূড়ান্ত পর্বে মুখোমুখি হন কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বাঘা শরীফ ও চট্টগ্রামের রাশেদ বলী। প্রায় ১১ মিনিটের টানটান উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই শেষে বিজয়ীর মুকুট ওঠে বাঘা শরীফের মাথায়।
বিশেষ আকর্ষণ ছিল গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহ জালাল বলীর সিদ্ধান্ত—তিনি নিজে প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়ে নিজের শিষ্য বাঘা শরীফকে সুযোগ দেন, যা বলী মহলে প্রশংসিত হয়েছে। তৃতীয় স্থান অধিকার করেন রাঙামাটির সৃজন চাকমা, যিনি টানা তৃতীয়বারের মতো একই অবস্থান ধরে রাখলেন।
বলী খেলাকে ঘিরে চলমান তিন দিনের বৈশাখী মেলায় (২৪–২৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের লালদীঘি এলাকায় প্রাণের উৎসব বিরাজ করছে। মেলায় লোহা, বাঁশ, কাঠ ও মাটির তৈরি গৃহস্থালির সামগ্রী, দেশীয় খাবার, মিষ্টান্ন ও শিশুদের খেলনার শতাধিক দোকান বসেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়েছেন চারপাশে।
তবে এবার আন্দরকিল্লা থেকে কোর্ট বিল্ডিং সড়কের মূল সড়কে মেলা বসতে দেওয়া হয়নি, জানিয়েছেন আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ। এ সময় সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিএমপি কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে বলী খেলার মঞ্চ ও মেলা এলাকায়।
উল্লেখ্য, ১৯০৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে বদরপাতি এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আবদুল জব্বার সওদাগর যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ বলী খেলার সূচনা করেন। পরে ব্রিটিশ সরকার তাকে `খান বাহাদুর` উপাধি দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বলী খেলোয়াড়রা জানান, এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে অংশ নিতে পারা তাদের জন্য গর্বের বিষয়। তারা বলেন, এ ধরণের আয়োজন আগামী প্রজন্মকে শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
আগামীকাল (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত মেলা ও বলী খেলা চলবে।
একুশে সংবাদ//চ.প্র//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :