AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কুষ্টিয়ার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উন্নয়নে বেসরকারি খাতের উদ্যোগ


Ekushey Sangbad
আলমগীর মন্ডল, মিরপুর, কুষ্টিয়া
০১:২৯ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

কুষ্টিয়ার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উন্নয়নে বেসরকারি খাতের উদ্যোগ

কুষ্টিয়া বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ জেলা, যা শুধু লালন শাহ, মীর মশাররফ হোসেন বা বাউল সংগীতের জন্যই পরিচিত নয় – অর্থনীতি, কৃষি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

এই জেলা তার ভৌগলিক অবস্থান ও শিল্প-ব্যবসার প্রসারে আজ এক সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। টেক্সটাইল থেকে শুরু করে কৃষি কিংবা উদীয়মান আইসিটি খাত কুষ্টিয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। ঠিক এই পর্যায়ে টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজ ও পরিবেশের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উদ্যোগ এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। 

জেলার সার্বিক উন্নয়নে শুধু সরকার নয়, বহু বছর ধরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও আন্তরিক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

কুষ্টিয়ায় নিরাপদ পানির সংকট দীর্ঘদিনের। কয়েক বছর আগেই এ এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে একযোগে প্রায় ২০০০ মানুষ আক্রান্ত হয়। সমস্যাটি প্রকাশ্যে আসার পর ইউনিলিভার পিউরিট ‘পানির গল্প’ নামে তাদের একটি উদ্যোগের আওতায় একটি গবেষণা দল গঠন করে এবং কুষ্টিয়ার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে। বর্ষায় পানি জমে যাওয়ায় টিউবওয়েল ও সরবরাহকৃত পানির উৎসগুলো দূষিত হয়ে পড়ে, যা রোগ ছড়ানোর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দলটি মীলপাড়া, কোর্টপাড়া, মজমপুর, আমলাপাড়া ও তালিপাড়াকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে সনাক্ত করে। এই উদ্যোগের আওতায় স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয় এবং ১০০টি পরিবারে পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র বিতরণ করা হয়। মানুষের জীবন রক্ষায় এটি ছিল বেশ সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ।

তৃণমূল পর্যায়ে নিরাপদ পানি পৌঁছে দিতে কেবল ইউনিলিভার নয়, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বিএটি বাংলাদেশও। প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক সারা দেশে স্থাপিত ১২৬টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের মধ্যে কেবল কুষ্টিয়াতেই রয়েছে ৪৮টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। সদর, মিরপুর, দৌলতপুর, কুমারখালী ও ভেড়ামারা উপজেলায় এসব প্ল্যান্ট স্থাপনের ফলে হাজার হাজার কৃষক ও তাদের পরিবার প্রতিদিন নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে পারছে, যা পানিবাহিত রোগ এবং আর্সেনিকজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সাহায্য করছে।

নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে লালন শাহ সেতু, বাইপাস সড়ক, কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়ক এবং জিকে খাল ঘিরে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের ফলে এখানের পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ১৯৮০ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠান সারা দেশে ১৩ কোটি গাছের চারা বিতরণ করেছে, যা দেশের পরিবেশ সংরক্ষণে একটি দৃষ্টান্তমূলক অবদান।

এদিকে কুষ্টিয়ার মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যাংকটি কুষ্টিয়াভিত্তিক শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক সংগঠন মেধার সাথে যুক্ত হয়ে বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম চালু করে। ২০১৫ সাল থেকে তারা শিক্ষার্থীদের জন্য এই বৃত্তি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে, যা স্থানীয় শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। 

একইভাবে, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্থানীয় তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহ দিতে গ্রামীণফোন কুষ্টিয়ায় স্থাপন করেছে ‍‍`ইউটিউব ভিলেজ‍‍` নামের নেটওয়ার্ক টাওয়ার। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের মাধ্যমে এখানকার ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতারা এখন আরও নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করতে পারছেন। যা তাদের ভিডিও আপলোড, সম্পাদনা এবং চ্যানেলের পারফরম্যান্স মনিটরিংয়ের কাজকে আরও সহজ করেছে। উদ্যোগটি কুষ্টিয়ার তরুণ সমাজের আত্মনির্ভরশীল করতে উৎসাহ জুগিয়েছে।

স্থানীয় এনজিওগুলোর পাশাপাশি এখানে আরও কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন, যারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এরই অংশ হিসেবে ফেয়ার নামের একটি সংগঠন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে বিজ্ঞান ক্লাবের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে গাছ লাগাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন স্থানীয়দের অনেকেই।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি রক্ষার উপায় নয়, বরং এটি সমাজ গঠনের হাতিয়ারও বটে। কুষ্টিয়ার মত সম্ভাবনাময় জেলায় বেসরকারি খাতের এমন দায়িত্বশীল উদ্যোগ একটি টেকসই ও মানবিক ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো জাগায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে যায় এবং দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।



একুশে সংবাদ//মি.কু.প্র//এ.জে

Shwapno
Link copied!