চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় দ্বিতীয় স্ত্রী ও মেয়েদেরকে সম্পত্তি বঞ্চিত করে চার ছেলেরা নিজেদের নামে জমি লিখে নেওয়ার ঘটনায় গ্রাম্য সালিশে সমাধানের মধ্য দিয়ে সেই মৃত মাজেদ বিশ্বাসের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।
গতকাল সোমবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সুন্দরপুর ইউনিয়নের একটি গোরস্থানে জানাজা শেষে লাশ দাফন কার্য সম্পন্ন হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মাস্টার।
ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর মাস্টার বলেন, মৃত মাজেদ বিশ্বাসের লাশ আটকানোর ঘটনায় গতকাল সকাল সাড়ে দশটার দিকে আমরা গ্রাম সালিশে বসেছিলাম। সেখানে তার দুই ছেলে সালিশী বৈঠকে স্বীকার করে তার পিতাকে প্ররোচনা দিয়ে তারা তার সৎ মাকে তালাক দিয়েইছিলো এবং জালিয়াতি করে তার পিতার সম্পত্তি তারা তিনভাই ও এক ভাতিজার নামে লিখে নিয়েছিল। এই ঘটনায় সালিশী বৈঠকে তারা ক্ষমা চান এবং পরে সালিশে সিদ্ধান্ত হয় যে, তারা যে সম্পত্তি লিখে নিয়েছে তাসহ তার পিতার সকল সম্পত্তি আইন অনুযায়ী সবার মাঝে সমান ভাবে ভাগ বন্টন হবে এবং জমি রেজিস্ট্রির পর দাফন সম্পন্ন হবে। কিন্ত জমি জায়গা রেজিস্ট্রি করতে হলে আবার নতুন করে খারিজ করতে হবে, যা করতে কমপক্ষে একমাস মতো সময় লাগবে। আর এতোদিন লাশ রাখা সম্ভব নয়। এজন্য মরা পাগলা এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াসিন আলীর ছেলে মো: কামরুল ইসলামের কাছে ফাঁকা চেক জমা রাখার সিদ্ধান্ত হয় এবং খারিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আইন অনুযায়ী সব অংশীদারের মাঝে জমি সমবন্টন করার পর মাজেদ বিশ্বাসের ছেলেদের কাছে ফাঁকা চেক ফেরত দেওয়ারও সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। পরে সন্ধ্যা সোয়া ০৭টার দিকে মাজেদ বিশ্বাসের দাফন কার্য সম্পন্ন হয়।
হামফুল বেগমের ভাতিজি জামাই আলি হায়দার বলেন, সালিশে বৈঠকে আইন অনুয়ায়ী আমার ফুফা শ্বশুড়ের জমি অংশীদারদের মাঝে সমবন্টনের সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং জমির খারিজ কাজ সম্পন্ন করার পর অংশীদারের মাঝে রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এজন্য সালিশদারের জামানতে একটি ফাঁকা চেক জমা দেওয়া হয়েছে এবং স্টাম্পে এই বিষয়ে লিখিত করা হয়েছে । আমার ফুফু শ্বাশুড়ি বর্তমানে মৃত ফুফা শ্বশুড়ের বাসায় আছেন। আমরা এই সালিশে বৈঠকের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট এবং শেষ পর্যন্ত এটির বাস্তবায়ন চাই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে দুই পক্ষের বিষয়টি সুরাহা হয়েছে এবং মৃত ব্যাক্তির লাশ দাফনের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ছে। এছাড়া উক্ত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
প্রসঙ্গত, রোববার (২৭ এপ্রিল) মাজেদ বিশ্বাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। লাশ দাফনের জন্য তার ছেলেরা গ্রামের বাড়ি নিয়ে এলে মাজেদ বিশ্বাসের দ্বিতীয় স্ত্রী হামফুল বেগম ও তার মেয়েরা এলাকবাসীকে সাথে নিয়ে দাফনে বাঁধা দেন। পরে দুই পক্ষের বিষয়টি সুরাহা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যব্যাক্তিরা সালিশী বৈঠকে বসেন এবং সুরাহা শেষে লাশ দাফন কার্য সম্পন্ন হয়।
একুশে সংবাদ//চা.প্র//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :