সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব এ দুর্গাপূজা। উপলক্ষে সারাদেশে মণ্ডপে মণ্ডপে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। পূজা কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বেশ সজাগ। পুলিশ র্যাবের পাশাপাশি কঠোর নজরদারিতে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। কারণ পূজার দুই মাস পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এজন্য ঢাকাসহ সারাদেশে ৩২ হাজার ৪০৭টি মণ্ডপের নিরাপত্তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পূজার সময় কঠোর নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পুলিশ সদরদপ্তর থেকেও সব জেলায় জেলায় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও নিরাপত্তার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে যেন পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা না ঘটে তাই সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা শেষ করতে বদ্ধপরিকর সরকার।
মণ্ডপে মণ্ডপে উৎসবের আনন্দ বিরাজ করলেও তারপরও শঙ্কায় রয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নেতারা বলছেন, এবছর জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির মধ্যে গুজব নিয়ে বেশি শঙ্কা রয়েছে। কারণ দুই বছর আগে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় দুর্গাপূজায় গুজবকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপূজা ঘিরে ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে কেউ যেন গুজব ছড়াতে না পারে, সেজন্য সাইবার ইউনিটগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। পুলিশ সদরদপ্তর ও জেলা পর্যায়ে থাকবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সারাদেশে মণ্ডপে মণ্ডপে পুলিশের পাশাপাশি দুই লাখ আনসারও থাকবে। কোনো পূজামণ্ডপ থেকে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ সহযোগিতার জন্য কল এলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে বেশ কিছু নিরাপত্তামূলক পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরামর্শগুলো হলো-
পূজামণ্ডপে আগত নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক প্রবেশপথ ও প্রস্থান পথের ব্যবস্থা রাখা। পূজামণ্ডপে কোনো ব্যাগ, থলে বা পোটলা নিয়ে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা। পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থাপন করা। গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আর্চওয়ে গেট স্থাপন করা।
পূজামণ্ডপে ও প্রতিমা বিসর্জনস্থলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা। সম্ভব হলে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর, চার্জার লাইট, হ্যাজাক লাইট ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা।
পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা। স্বেচ্ছাসেবকদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও স্বেচ্ছাসেবক লেখা আর্মড ব্যান্ড প্রদান করা।
পূজা চলাকালে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো থেকে বিরত থাকা।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার অথবা ব্লগ ইত্যাদি এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন অমূলক ঘটনা বা গুজব সৃষ্টি করে কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে পুলিশকে জানানো।
পূজা উদযাপনকালে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। আজান ও নামাজের সময় মাইক ও বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখা।
প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রার নির্ধারিত রুট ব্যবহার করা। পূজামণ্ডপে শোভাযাত্রা এবং প্রতিমা বিসর্জনের সময় দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা। রাতের বেলায় পূজামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
প্রয়োজনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুম : ০১৩২০০০১২৯৯, ০১৩২০০০১৩০০, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কন্ট্রোল রুম : ০২-৫৫১০২৬৬৬, ০২-২২৩৩৮১১৮৮, ০২-৪৭১১৯৯৮৮, ০১৩২০০৩৭৮৪৫-৪৬, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কন্ট্রোল রুম : ০২-৪৮৯৬৩১১৭, ০১৭৭৭৭২০০২৯ এবং ফায়ার সার্ভিস সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম : ০২-২২৩৩৫৫৫৫৫, ০১৭১৩০৩১৮১-৮২ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়।
এ ছাড়া যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সেবা পেতে টোল ফ্রি জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে কল করতে বলা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :