দুই দিন কেটে যাবার পরও পোড়াগন্ধ যায়নি। যাতায়তকারী নাগরিকেরা পোড়া পুলিশ বক্সের কাছে কাছে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছেন ২৮ অক্টোবরের ভয়ঙ্কর সহিংসতা। তাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে আগুনের লিলিহান শিখা।
২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় যে নাশকতা, ভাঙচুর, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা মানুষের মনে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে তা দু’দিন পরও মুছে যায়নি।
বাস-অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেওয়া, প্রধান বিচারপতি বাসভবনে হামলা-ভাংচুর ইত্যাদি ঘটনায় ৩৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় ৩০টি ও ঢাকা জেলার চার থানায় পৃথক ৪টি মামলা।
এসব মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসসহ ১ হাজার ৫২০ জন এবং অজ্ঞানপরিচয় আসামির সংখ্যা আরও পাঁচ হাজার জন।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে শনিবার মহাসমাবেশের দিন ও রোববার এসব মামলা দায়ের করা হয়।
তথ্যমতে, রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় কনস্টেবল হত্যাসহ তিন মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৬৭ জন। এই মামলার প্রধান আসামী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১৬৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রমনা মডেল থানায় পৃথক ৩টি মামলায় ১৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় মির্জা আব্বাসকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় আরও ৭২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার আরেক মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ ৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আহমেদ খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, সামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ভিপি জয়নাল, মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
শাহজাহানপুর থানায় ৪ মামলা মামলায় আসামীর সংখ্যা ৪৩ জন। এর মধ্যে নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া মহানগরীর শাহআলী থানায় ১৮ জন, কাফরুল থানায় ৪১ জন, যাত্রাবাড়ী থানায় ১৫ জন, ডেমরা থানায় ১৭ জন, উত্তরা পূর্ব থানায় ৩৪ জন, ওয়ারী থানায় ৩৮ জন, ভাষানটেক থানায় ১৮ জন, দারুসসালাম থানায় ২৬ জন, ভাটারা থানায় ৩১ জন, মতিঝিল থানায় ৬১ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে।
খিলগাঁও থানায় ৬১ জন ও অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০ জন, মুগদা থানায় ২৪ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ জন, রামপুরা থানায় ২৪২ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার ৫০০ জন, হাতিরঝিল থানায় ১৩ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ জন, পল্লবী থানায় ৫৮ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জন, বাড্ডা থানায় ৪১ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ জন, শাহবাগ থানায় ৯ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
ঢাকা জেলার সাভার থানায় নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে এজাহারনামীয় ১৮ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় ১৩০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ধামরাই থানায় করা মামলায় ৪৩ জন এজাহারনামীয় আসামি। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি ১৫০ জন।
মহাসমাবেশের পর অটোরিকশা পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় কাউছার আহমেদ নামে একজন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সমাবেশের পর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সুমন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য, একজন যুবদল কর্মী এবং একজন সাংবাদিক নিহত হন। পুলিশ, সাংবাদিক ও বিএনপি নেতাকর্মীসহ আহত হন সহস্রাধিক।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :