ডলার সংকট আর মূল্যস্ফীতি সামলানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর ২০২৩-২০২৪। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক বা অনুকুলে রাখতে শুরু থেকেই সতর্ক সরকার। এমন ভাবনা থেকেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে খরচ কমানোসহ নতুন যানবাহন না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
রোববার (২ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ শুরু হওয়া অর্থবছরের বাজেটে এ সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়ে এক পরিপত্র জারি করে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন বাজেটের অধীন প্রদর্শিত বরাদ্দ শতভাগ ব্যয় করতে পারবে। তবে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে হবে।
অন্যদিকে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় বৈদেশিক ভ্রমণ এবং ওয়ার্কশপ/সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে অর্থ বিভাগ এ নির্দেশনা দিয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন গাড়ি কেনা যাবে না এবং প্রকল্পের অর্থছাড় পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
অর্থ বিভাগের (বাজেট অনুবিভাগ) উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কতিপয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে সরকার নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
তবে গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের নীতিতে এ পর্যন্ত সরকারি ব্যয়ে ১৫,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এই অর্থের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাত থেকে সাশ্রয় হয়েছে ১,০৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া পণ্য ও সেবাসহ পূর্ত কাজ এবং শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের লাগাম টেনে সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ১৪,০০০ কোটি টাকা।
কিন্তু জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে এই দুই খাতে বরাদ্দের ২০ শতাংশ সাশ্রয়ের যে নির্দেশনা দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়, তা কোনো কাজে লাগেনি। সরকারি দপ্তরগুলো ব্যবহারে কিছুটা সাশ্রয়ী হলেও দাম বাড়ার কারণে সরকারি চাকরিজীবীদের পেট্রোল ও বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে কোনো অর্থ সাশ্রয় করতে পারেনি সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে, পরিচালনা বাজেটের অধীনে বিদ্যুত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আর জ্বালানি খাত মানে গ্যাসে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। পরিচালনা বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালনপূর্বক অর্থ বিভাগের পুর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
তবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সকল প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ/ ওয়ার্কশপ/ সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় উদ্দেশ্য সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে।
পরিচালনা ও উন্নয়ণ বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা/বিশ্ববিদ্যালয়/দেশ কর্তৃক প্রদত্ত স্কলারশিপ/ফেলোশিপের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাষ্টর্স ও পিএইডি কোর্সে অধ্যয়ন করতে হবে।
বিদেশি সরকার/প্রতিষ্ঠান/উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণে ও সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং সরররাহকারী/ ঠিকাদার/ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ কারিগরি ঞ্জানসম্পন্ন কর্মকর্তারা সেবা/পণ্যের মান নিরীক্ষা/পরিদর্শন করবে।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :