পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে পোশাক শিল্পের মালিকরা জরুরি সভা করেছে। সভায় পোশাক শিল্পের মালিকরা জানিয়েছে, শ্রমিকরা কাজ না করে আন্দোলন বা কারখানা ভাঙচুর করলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি আলোচনা সভা শেষে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইিএর সভাপতি ফারুক হাসান এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সভায় প্রায় দুইশ কারখানা মালিক উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ফারুক হাসান বলেন, ‘শ্রমিকদের কাছে জানাতে চাই, কাজ না করে কোনো কারণে বাইরে বের হলে কারখানা বন্ধ করা হবে। যে কারখানা কাজ করতে পারছে না সেটা বন্ধ করে দেয়া হবে। ভাঙচুর কার্যক্রম চললে আমরা কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হব। এর আগে আমরা ১৩ এর ১ ধারায় বন্ধ করেছিলাম কিন্তু তারপরও আমরা শ্রমিকদের টাকা দিয়েছি। এবার বলে দিচ্ছি, ১৩ এর ১ ধারায় বন্ধ করলে এবার কোনো পেমেন্ট করব না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, যেসব শ্রমিক নেতারা ইন্ধন দিয়ে ভাঙচুর করেছে তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়। বাইরে থেকে যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদেরও গ্রেফতার করা হোক। ডিজিএফআই ও এনএসআইকে আমরা তথ্য দিয়েছি। আরো ভিডিও তথ্য দেব।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, কারখানা ভাঙচুর হলে বা শ্রমিকরা কাজে না গেলে ১৩ এর ১ ধারা বাস্তবায়নে সবাইকে একমত হতে হবে। এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হবে, সবাইকে তা মানবে। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে এলাকায় সমস্যা হবে, সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, করোনায় ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। সে জায়গা থেকে যখন ঘুরে দাঁড়াবো তখন আবার সংকট। এই সময়টি অত্যন্ত সেনসিটিভ। সবাই চাচ্ছে এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে। বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা শ্রমিক নেতাদের পেছনে আছে। আমরা সকলে একমত হয়েছি। নো ওয়ার্ক, নো পে। কোনো বায়ার যখন যথাসময়ে প্রোডাক্ট পাবে না সে তখন কোনো মার্সি করবে না। সুশীল সমাজকে বলতে চাই শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে কোনোভাবে আমাদের মধ্যে বিভাজন করবেন না। সরকারকেই ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা দিতে হবে। যে ফ্যাক্টরি আক্রান্ত হবে ১৩ এর ১ ধারায় বন্ধ হয়ে যাবে।
কারখানা মালিক আরিফ ইব্রাহিম বলেন, শ্রমিকদের নিয়ে প্রতিবারই এমন হয়, প্রতিবারই সমাধান হয়। কষ্ট হলেও আমরা সমাধান করি। বেতন দেই নিয়মিত। আশুলিয়ায় প্রতিবছর যা ঘটে এ বছরের ঘটনা ভিন্ন। এটা শ্রমিকরা কেউ করছে তা আমি বিশ্বাস করি না। বহিরাগতরা ঢুকেছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ‘নো ওয়ার্ক, নো পেমেন্ট’ ১৩ এর ১ ধারায় যদি কারখানা বন্ধ করা হয় পরে যেন তাদের এটা মাফ করে দেয়া না হয়।
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, যারা মারামারি করছেন, কারখানা জ্বালিয়ে দিচ্ছেন, তারা সবাই বহিরাগত। যারা দেশের অগ্রগতি চান না, তারা এসব কাজ করছেন। কামরুল নামে এক শ্রমিক নেতার মাধ্যমে উৎপত্তি হয়ে এই অবস্থা। কিন্তু এখন অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত হয়ে গেছে। যারা দেশের উন্নয়ন চায় না তারা টাকা দিচ্ছে, হেলমেট পড়ে পুলিশের সঙ্গে মারামমারি করেছে। কারখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে। এরা কারা? নেপথ্যে প্ররোচনা দিচ্ছে দেশী-বিদেশী যারা রাষ্ট্রের উন্নতি চায় না। শ্রমিকরা এটা করতে পারে না।’
গার্মেন্টস মালিক আব্দুল্লাহ আল-জহির স্বপন বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা খাতে, প্রতিটি জায়গায় ঘুস দিতে হয়। এনবিআর, কাস্টমস, পুলিশ, ভ্যাট, শ্রম মন্ত্রণালয় সব জায়গায় ঘুস দিয়ে কাজ করতে হয়। খাত ভেদে ৫ থেকে ৭ শতাংশ ঘুস দিয়ে কাজ করতে হয়। কেন ঘুস দিতে হবে? কালকে থেকে বলুক যে ঘুস লাগবে না। আমরা শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে দেব।
একুশে সনবাদ/ব.ব.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :