বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের বাইরে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৪টি পণ্য ট্রাকসেলে বিক্রি করা হবে। সেগুলো হচ্ছে, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, আলু ও পেঁয়াজ। এসব পণ্য বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে মিলবে।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বাণিজ্য সচিব বলেন, টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে ঢাকাতে ১৩ লাখ পরিবারকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) থেকে ঢাকাতে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হবে। এতে নতুন করে আরও ৯ হাজার পরিবার যোগ হবে। প্রতিটি ট্রাকে ৩০০ জন এই পণ্যগুলো পাবে। শুক্র ও শনিবার বাদে প্রতিদিন বিক্রি হবে। তবে বিভিন্ন দিন বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হবে।
পরবর্তীতে সব দিনই এই কর্মসূচি চলবে উল্লেখ করে সচিব বলেছেন, একেক দিন ঢাকার একেক স্পটে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে।
তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ‘এই সেলে যে কেউ ২ কেজি করে মসুর ডাল, আলু ও পেঁয়াজ এবং ২ লিটার সয়াবিন তেল নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আলু প্রতি কেজি দাম পড়বে ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, মসুর ডাল ৬০ টাকা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকা। তবে এই মুহূর্তে চিনি দেয়া যাচ্ছে না। চিনি পাওয়া গেলে দেয়া হবে।’
তিনি জানিয়েছেন, যিনি আগে আসবেন তিনি আগে পাবেন, এই ভিত্তিতে এই ট্রাকসেল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আমদানি বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই ট্রাকসেলের পরিধি বাড়ানো হবে।
সচিব বলেন, সরকার ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য দিচ্ছে। প্রতিটি পণ্য অর্ধেক দামে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের আওতাধীনরা যেন এই পণ্য না নেন, এই বিষয়টি নিশ্চিতে তদারকি করা হবে।
বৈশ্বিক অবস্থা ও ডলারের বিনিময় হারের দাম বেড়ে যাওয়ায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন বাণিজ্য সচিব। তবে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ হাজার ৯৫ টন আলু আমদানি হয়েছে। ২ লাখ টন আলুর আইপি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
ডিম আমদানি নিয়ে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ২৫ কোটি ডিম অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিপরীতে ৬২ হাজার পিস ডিম আমদানি হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ডিম আমদানি না, ডিমের দাম কমানো। দাম করে গেলে আমদানি কম হলেও অসুবিধা নেই। তবে বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আলু ও ডিম আমদানি হবে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ডিম ও আলু আমদানি হওয়ায় উল্লেখযোগ্য ফল আমরা পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা গেছে, কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৭ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হবে। জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু বের হবে।
টিসিবি কার্ডধারীদের এখন আলু দেয়া হবে না জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, কারণ জেলা প্রশাসকরা সোমবার (১৩ নভেম্বর) থেকে সরকারি দামে অর্থাৎ, ৩৬ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি নিশ্চিত করবে। তেল, চিনি, ডাল, আলু এসব পণ্য আমদানি করতে যেন ডলারের সমস্যা না হয় সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, একজন ভোক্তা মাসে একবারই এ ট্রাকসেল থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। এই বিষয়টি নিশ্চিতে একেক দিন ঢাকা শহরের এক এক স্থানে এই পণ্য বিক্রি করা হবে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। তাছাড়া বর্তমানে সরকার নির্ধারিত প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৯ টাকা এবং খোলা পাম তেলের দাম ১২৪ টাকা। যা বাড়ানোর জন্য গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :