দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে ৪ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৩২৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ডলার সংকটে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপের কারণে কমেছে পণ্য আমদানি। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউজেও কমেছে আমদানি বাণিজ্য।
একারণে ধস নেমেছে রাজস্ব আদায়ে। গত চার মাসেই ৩২৮ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ ছাড়াও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এবং কাস্টম কর্তৃপক্ষের হয়রানি এ বন্দরে আমদানি কমার কারণ। তারা আরও বলেন, কয়েক বছর ধরেই এ অবস্থা চললেও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে অতীতের চেয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ কারণে নিত্যনতুন হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কর্তৃপক্ষের মনমতো এইচএস কোড (পণ্য শনাক্তকরণ ও ট্যাক্স নির্ধারণ কোড) পরিবর্তনের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরে ঝুঁকছেন। কতিপয় কর্মকর্তার অনিয়ম ও হয়রানির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে কাস্টম কর্তৃপক্ষ বলছে, শুল্ক ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বাড়াতে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ওয়্যারহাউজিং করপোরেশনের অধীনে বেনাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০২ সালে স্থলবন্দরের মর্যাদা পায়। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় এবং যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় মোটর পার্টস, ফেব্রিকস, আয়রন, স্টিল, মোটরগাড়ি, ফল আমদানিতে মুখর থাকতো বেনাপোল স্থলবন্দর। কিন্তু এখন এসব আমদানিকারকের আনাগোনা নেই এ বন্দরে। এতে কমেছে আমদানি, কমেছে রাজস্ব আয়ও।
আমদানিকারকরা অভিযোগ করেন, ডকুমেন্ট ঠিক মতো সাবমিট করছেন তারা। এরপরও এইচএস কোড ও আমদানি মূল্য নিয়ে প্রতিনিয়ত জটিলতা তৈরি করছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মাছ ও ফলমূলের মতো উচ্চ পচনশীল পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। আগে আপেল আমদানিতে শুল্ক ছিল ৬১.৬৫ টাকা, যা চলতি অর্থবছর দাঁড়িয়েছে ৮৯.২২ টাকা। তাদের মতে, এসব কারণে আমদানি কমেছে।
চলতি অর্থবছর এ কাস্টম হাউজে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ছয় হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। প্রতি মাসে গড় লক্ষ্যমাত্রা ৫১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে (জুলাই-অক্টোবর) চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৭৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চারমাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২৮ কোটি টাকা।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮০ কোটি টাকা কম হয়।
এ নিয়ে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী জুয়েল রানা বলেন, ভারতের নাসিক থেকে আসা আপেলসহ অন্য উচ্চ পচনশীল পণ্যের চালান আসতে প্রায় তিনদিন লাগে। ফলে অধিকাংশ কার্টনেই ২-৫ কেজি ফল পচে যায়। কিন্তু কাস্টম কর্তৃপক্ষকে এ পচামালেরও রাজস্ব দিতে হয়, যা আগে ছিল না। এ ধরনের পচনশীল পণ্যের রাজস্ব আদায় করায় অধিকাংশ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, রাজস্ব আদায়ে মূলত ঘাটতি হয়েছে উচ্চশুল্কের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায়। বিশেষ করে মোটরগাড়ি ও মোটর পার্টস থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। আপেল আমদানিতে ২৪ কোটি ও ফেব্রিকস আমদানিতে ২১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। মোট ৩২৮ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা বাড়াতে কাস্টম কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :