ঋতুরাজ বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে রাঙাতে কতই না আয়োজন। যার মূল অনুষঙ্গ রঙ-বেরঙের ফুল। সব আবেদন, অনুরাগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের বড় মাধ্যম ফুল। শহুরে প্রকৃতিতে এসবের কিছু কমতি থাকলেও সংরক্ষিত বাগানগুলোতে দেখা মিলেছে বাহারি সব ফুলের। তাছাড়া শীতের জীর্ণতা আর শুষ্কতাকে পেছনে ফেলে বসন্তের সজীবতাকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মানুষও।
‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত’- এ দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা দিবসে সবাই প্রিয়জনকে দিতে চায় তাজা গোলাপ, বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে খোপায় বাঁধে গাঁদা ফুল। সবমিলিয়ে কদর বেড়েছে ফুলের রানি গোলাপসহ অন্যদের। এবছর বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও সরস্বতী পূজা একইদিনে হওয়ায় রাজধানীর ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শাহবাগ ও আগারগাঁও এলাকার ফুলের দোকানগুলোতে দেখা গেছে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কীভাবে নিজের দোকানের ফুলগুলো সবার সামনে ফুটিয়ে তোলা যায় সেই পরিকল্পনা করছেন তারা।
তিন উৎসব একদিনে হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ২০ কোটি টাকারও বেশি ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন। এ মাসের ১৪ তারিখ এবং ২১ তারিখ সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়। ১৪ তারিখে গোলাপ আর ২১ তারিখে গাঁদা ফুল বেশি বিক্রি হয়। এসব দিনে ফুলের দোকানগুলোতে অনেকে বাড়তি কর্মচারী ও কারিগর চুক্তিতে রাখেন।
শাহবাগে একটি খুচরা বাজার ও একটি পাইকারি ফুলের দোকান আছে। যশোর, বেনাপোল, ফরিদপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ, দোহার, নবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে ফুল আসে। পরে এখান থেকেই ঢাকার অন্য খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা ফুল সংগ্রহ করেন। এসব ফুলের মধ্যে রয়েছে– গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রথস্টিক, জিপসি, গ্যালেনডোলা ও চন্দ্রমল্লিকা। শাহবাগে ৫০টির মতো খুচরা ফুলের দোকান রয়েছে। ক্রেতারা এই বাজার থেকে ফুল সংগ্রহ করেন।
সারা বছর শাহবাগে ফুল বিক্রি হয়। দৈনিক প্রায় ৪০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। আর আগামী ১৪ ও ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি পাইকারিতে ফুল বিক্রি হবে। আর খুচরা বাজার তো আছেই। এখানে ২৪টি জেলা থেকে ফুল আসে।
এবছর বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও সরস্বতী পূজা একদিনে হওয়ায় ফুল বিক্রির পরিমাণ অন্যান্য বছরের চেয়ে আরও বেশি হবে। ফুলের ব্যবসা করার মাস হচ্ছে ফেব্রুয়ারি। এসময়ে চাহিদাও থাকে বেশি। পাইকারিতেও কিছুটা বেশি দাম দিতে হয়। সেই প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে। মঙ্গলবারের জন্য অগ্রিম ফুলের অর্ডার দিয়ে রেখেছি।
বর্তমানে ভালো মানের গোলাপ ফুল এখন ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোলাপি রঙের বিদেশি গোলাপ এখন প্রতি পিস ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া রজনীগন্ধার স্টিক মানভেদে ২০-৮০ টাকা, প্রতিটি গাঁদার মালা ৬০-১২০ টাকা, জারবেরা ফুল ৫০-১২০ টাকা, অর্কিড স্টিক ৮০-১০০ টাকা, গ্লাডিওলাস রং ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়িরা বলছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি সাধারণ গোলাপ ৮০-৯০ টাকায় এবং বিদেশি গোলাপ ১৫০ টাকার বেশিতে বিক্রি হবে।
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। অন্য সময়ের চেয়ে ফুলের দাম তিন গুণ বেশি। ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি হয়ে ওঠে, কারণ এটি ভালোবাসা প্রকাশের উপযুক্ত উপহার। ফুলের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভালোবাসার আনন্দ ও মনোমুগ্ধতা বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ঠিক এ সুযোগটি নিচ্ছেন। এটি ঠিক না।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :