বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তারিকারক দেশ ভারত। ডিসেম্বরে পেঁয়াজের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। তবে তার আগেই নতুন করে আবার নিষেধাজ্ঞার বার্তা দিলো দেশটি। শুক্রবার (২২ মার্চ) ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মহাপরিচালকের দপ্তর (ডিজিএফটি) থেকে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। এদিকে ভারতের নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে কি না এ নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
তবে চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে এসব পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। আগামী দুদিনের মধ্যে ১৬০০ টন দেশে আসবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, শুল্ক কমানো হয়েছে, যা আগে ৮০০ ছিল এখন ৪০০ টাকা। চাহিদা এবং সরবরাহের ওপর নির্ভর করে বাকি পেঁয়াজও দেশে আনা হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে টাঙ্গাইলে এক সভায় বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। বাজার তার আপন গতিতেই চলবে। কেউ যদি মজুতদারি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে পেঁয়াজ আমদানির কথায় প্রভাব পড়েছে দেশের পেঁয়াজের বাজারে। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে জানান বিক্রেতা ও ক্রেতারা। আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে আসলে দাম অনেক কমবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আমদানি করা না হলে ঈদের পরে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। তবে দেশে পেঁয়াজের যথেষ্ট আবাদ থাকায় আর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলে দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত বছর ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটি। যার মেয়াদ ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। তবে শনিবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী আদেশ আসার আগ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি স্থগিত থাকবে।
মুম্বাইভিত্তিক একটি পেঁয়াজ রপ্তানি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, এই আদেশ পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। এমনিতেই দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজ এখন পানির দামে বিক্রি হচ্ছে, তার ওপর আর কিছুদিন পর নতুন ফসল আসবে। তখন কী হবে? ডিসেম্বরে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের পাইকারি বাজারগুলোতে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ রুপিতে। এরপর দাম কমতে কমতে বর্তমানে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য নেমেছে ১ হাজার ২০০ রুপিতে। রপ্তানিতে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা আসায় সামনের দিনগুলোতে দাম আরও নেমে যাবে।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নেয়া এমন পদক্ষেপ বিদেশি বাজারে পেঁয়াজের উচ্চমূল্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতীয় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। তবে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি করা হয়।
গত ডিসেম্বরে ভারত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে বিশ্ববাজারে হু হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা দরে। কয়েক দিন আগে এর দাম প্রতি কেজি ১২০ টাকায় উঠেছিল
একুশে সংবাদ/ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :