ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলের বিপণিবিতানগুলো। ক্রেতারা বলছেন অন্য যে কোনো বারের তুলনায় এবার ঈদের পোশাকের দাম অনেক বেশি। চাহিদার বিপরীতে অল্প কেনাকাটা করেই বাড়ি ফিরছেন অনেকে। বিক্রেতারা বলছেন, কেনাবেচার যে চাপ থাকার কথা তা তুলনামূলক কম। সামনে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা বিক্রেতাদের।
শনিবার (৩০ মার্চ) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউসিয়া মার্কেট, চাঁদনি চক মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, মৌচাক মার্কেটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকালে ক্রেতা উপস্থিতি তেমন একটা না থাকলেও, দুপুরের পর ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মার্কেটগুলো। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে, নারীদের শাড়ি, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন পোশাক, জুতা ও প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানগুলোতে। মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
ক্রেতারা বলছেন, শুরুর দিকে এলে ভালো ডিজাইন পাওয়া যায়। শেষের দিকে পোশাকের সঠিক সাইজ পাওয়াও মুশকিল। ঈদের কেনাকাটা এগিয়ে রাখতে ছুটির দিনে শপিংমল-বিপণিবিতানে ঢুঁ মারছেন তারা। বিক্রেতাদের দাবি ফুটপাতের দোকানে দাম তেমন বাড়েনি। বাজার খাদ্যপণ্যের দামেই নাজেহাল মানুষ। অনেকের হাতেই টাকা নেই। তাই ব্যবসাও তেমন ভালো না।
পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে গাউছিয়া মার্কেটে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, "বাবার জন্য পাঞ্জাবি ও বোনের জন্য থ্রিপিস কিনেছি। পরিবারে সদস্যদের জন্য আরও কিছু কিনবো।" তবে এখানে এসে দেখছি আরও অনেকেই কেনাকাটা করতে এসেছেন। মানুষের প্রচুর ভিড়।
ইমরান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, শেষ মুহূর্তে কেনাকাটা করতে এলে মার্কেটে প্রচুর ভিড় থাকে। লোকজনের ভিড়ে পা ফেলা যায় না। সেজন্য আগেভাগেই ঈদের কেনাকাটা করতে নিউমার্কেটে এসেছি।
নিউ মার্কেট থেকে মেয়ের জন্য থ্রিপিস কিনেছেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, "গত বছরের তুলনায় দাম কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বেশি মনে হয়েছে পোশাকের। তবে কষ্ট করে হলেও ঈদের সময় পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে হবে।"
নিউমার্কেটের একজন বিক্রেতা জানান, গরম বাড়ছে, তাই গরমে পরার উপযোগী পোশাকগুলোই তারা তাদের দোকানে সাজিয়েছেন। ক্রেতারাও গরমে আরামদায়ক হবে এমন পোশাক কিনছেন। ঈদ সামনে তাই তাদের বিক্রিও বেড়েছে।
গাউসিয়া মার্কেটের নাদিম শাড়ির বিক্রয় কর্মী মোহম্মদ আলম জানান, "আমাদের গত বছররের এই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বিক্রি কম। আজ ছুটির দিনে অন্য দিনের স্বাভাবিক সময়ের মতো ক্রেতা ক্রেতা আসে। আগে এই ঈদের সময় এমন থাকতো যে, আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় পেতাম না।"
বাচ্চাদের ঈদ কেনাকাটা আগেভাগে সেরে রাখতে পুরান ঢাকা থেকে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে এসেছেন মারিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, বাচ্চাদের তো ঈদের খুশিটা অনেক বেশি। তাই তাদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে চলে এসেছি। এখন ওদের পছন্দ অনুযায়ী, ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করার চেষ্টা করছি। তবে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। আমাদের জন্য হয়তো তেমন কিছু না কিনলেও চলে। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য তো না কিনলে হয় না।
এদিকে ঈদ সামনে রেখে মধ্যবিত্তের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে রাজধানীর ফুটপাতের বাজারগুলো। শখ ও সাধ্যের মধ্যে যতটা সম্ভব মিল ঘটাতেই নিম্ম আয়ের ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ ফুটপাতের দোকানগুলো। বিক্রেতাদের দাবি ফুটপাতের দোকানে দাম তেমন বাড়েনি।
জসিম নামে রাজধানীর পান্থপথের ফুটপাতের দোকানের বিক্রেতা জানান, যাদের আয়-রোজগার কম তারাই মূলত ফুটপাতের দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে আসেন। আমরাও তাদের কাছে সীমিত লাভে পণ্য বিক্রি করে থাকি। কারণ আমরা চাই সবাই আনন্দের সঙ্গে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করুক। ঈদে বিক্রিও ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এবার ঈদের আমেজের মধ্যেই আসছে পহেলা বৈশাখ। চাঁদ দেখা যাওয়া সাপেক্ষে ঈদের দুদিন বাদেই বাংলা নববর্ষ আসছে। যে কারণে এবার ঈদ ও বৈশাখের কেনাকাটা একসঙ্গে কিনছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় ফ্যাশন মার্কেটগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশ বেচাবিক্রি হয় এই দুই উৎসবে, যার আর্থিক পরিমাণ ৩০,০০০ কোটি টাকার বেশি।
কে ক্রাফ্টের উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশের ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি খালিদ মাহমুদ খান বলেন, "আমাদের বিক্রি মোটামুটি ভালো। ছুটির দিন ক্রেতাদের ভিড় থাকে বেশি। তবে ছুটির দিন বাদে ভিড় কম থাকে। ছুটির দিন বাদে ভিড় কম থাকায় আমরা ধারণা করছি, শেষ ১০ দিনে বেশি কেনাকাটা হবে।
তিনি বলেন, "ঈদের পর পরই বৈশাখ। তাই কিছু মানুষ যারা বৈশাখেও কেনাকাটা করে, তারা এবার একসঙ্গেই দুই উৎসবের কেনাকাটা করে নিচ্ছেন।
ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নিত্যনতুন পোশাকের সম্ভার মেলে ধরেছে রাজধানীর বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলোও। উৎসবের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতায় জমে উঠছে এইসব ফ্যাশন হাউজ। সেইলরসহ কয়েকটি দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ঘুরে দেখা যায়, ঈদ আনন্দের সঙ্গে এবার বাড়তি আমেজ যোগ করেছে পহেলা বৈশাখ।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :