তীব্র এ গরমে জনজীবনে হাঁসফাস অবস্থা। আবহাওয়া অফিসের তথ্য, দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা আরও বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে জনজীবনে বাড়তে পারে অস্বস্তি। এই গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে ডাবের বাজারেও যেন আগুন লেগে গেছে! ১০০ টাকার নিচে মিলছে না কোন ডাব। এ পরিস্থিতিতে চাহিদা বাড়ছে ডাব ও তরমুজসহ অন্যান্য রসালো ফলের। আর সেই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এসব ফলের দামও।
রোববার (২১ এপ্রিল) বাবুবাজার, মিডফোর্ড, ঢাকা মেডিকেল ও রমনা পার্ক, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছোট সাইজের প্রতি পিস ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর মাঝারি ও বড় সাইজের ডাবের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত।
বিক্রেতারা জানান, তীব্র গরমে বেড়ে গেছে ডাবের চাহিদা। তাই সরবরাহ থাকার পরও দাম বাড়ছে। রাজধানীর রমনা পার্ক এলাকার ডাব বিক্রেতা আকবর জানান, বাজারে ডাবের কোনো সংকট নেই। তবে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি। তাই দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে গরম না কমলে শিগগিরই ডাবের সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই বিক্রেতা।
আড়ত পর্যায়ে একশ ডাবের দাম প্রায় এক থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কদিন আগেও একশ ডাব কিনেছি ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায়। তবে বর্তমানে সেটি কিনতে হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়। ছোট সাইজের ডাব হলে হয়তো কিছু কমে মিলছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ডাব বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এমনিতেই বাড়ে ডাবের দাম। তবে এ বছর তীব্র গরম পড়ায় সেটি আরও বেড়েছে।
এদিকে, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে ডাব অনেক কম। পাশাপাশি বেড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সংখ্যা। এতে ডাবের দাম আরও বাড়ছে।
রাজধানীর বাদামতলীর পাইকারি ডাব বিক্রেতা তৌহিদ হোসেন বলেন, গত বছর ডেঙ্গুর সময়ও পাইকারিতে ডাবের দাম এতো বাড়েনি। তবে এবার গরম বাড়ায় ডাবের চাহিদা প্রচুর বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় ডাব কম থাকায় দাম বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামেও বেড়ে গেছে ডাবের দাম। আগে যেখানে ছোট সাইজের ডাব ৩০-৪০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। এর সঙ্গে রয়েছে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ। সব মিলিয়ে কয়েকবার হাত বদলের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সেটি গিয়ে ঠেকছে অন্তত ১০০ টাকায়।
এদিকে ভোক্তারা বলেন, গত বছর ডেঙ্গুর সময় চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়ানোর খেলায় মেতেছিলেন ডাব ব্যবসায়ীরা। আর এবার মেতেছেন গরমকে পুঁজি করে। তাদের এ অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে পকেট ফাঁকা হবে সাধারণ ক্রেতাদের।
ঢাকা মেডিকেলে ছোট ভাইকে নিয়ে আসা মোস্তফা নামে একজন জানান, ডাবের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি পথ্য হলেও দিন দিন এর দাম বাড়ছে। ফলে সবার জন্য ডাব খাওয়া এখন বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে।
লক্ষ্মী রাণী নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ডাক্তার ডাব খাওয়ার পরামর্শ দেয়ায় অতিরিক্ত দাম হওয়া সত্ত্বেও ডাব কিনতে বাধ্য হয়েছি। এক পিস ডাব ১৫০ টাকা! এভাবে চললে অসুস্থরা কয়েক দিন পর আর ডাবই খেতে পারবে না।
একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মাহজাবীন চৌধুরী বলেন, ডাবে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা এ তীব্র গরমে যেকোনো ডায়রিয়া বা বমিজনিত কিংবা যেকোনো পানি স্বল্পতায় খুবই উপকারী। তাই রোগীদের সবসময়ই ডাব খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
তবে বর্তমানে প্রতি পিস ডাবের দাম ১৫০ টাকার কাছাকাছি। এতে অনেক রোগীই প্রয়োজন অনুযায়ী ডাব খেতে পারছেন না বলে জানান মাহজাবীন।
ডাবের বাজারের যখন এ অবস্থা, তখন অস্থির অন্যান্য ফলের বাজারও। রজমানের তুলনায় দাম সামান্য কমলেও এখনও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ ফল। বয়কটের ভয়ে বাজারে কমে যাওয়া তরমুজের দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে এর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :